সাক্ষাৎকার

পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে— এই চিন্তা মাথায় থাকত সবসময়

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে’। এই আয়োজনে আমরা সেই অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে কথা বলি যিনি তার আর্থিক, সামাজিক ও পারিবারিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন সফল হয়েছেন, নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এমনি একজন অদম্য মেধাবীকে নিয়ে আজকের আয়োজন। ১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, বেলা ৩টা অনুষ্ঠেয় ‘অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে’ অনুষ্ঠানের এ পর্বের অতিথি ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া লিপি খাতুন। তিনি বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় ইউনিয়ন সমাজকর্মী হিসেবে কর্মরত। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

লিপি কেমন আছেন আপনি? 

লিপি খাতুন: আলহামদুলিল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম, আপনি কেমন আছেন?

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

ওয়ালাইকুম আসসালাম। লিপি আমরা জানি যে, আপনার পড়ার জন্য দিনের আলো একমাত্র ভরসা ছিল। সেই জায়গা থেকে এখন আপনি সরকারি চাকরি করছেন, আপনার স্বপ্নপূরণ করেছেন। এই যাত্রার গল্পটা যদি বলতেন।

লিপি খাতুন: আমরা তিন বোন, দুই ভাই। আমার বাবা একজন কৃষক। ব্র্যাক স্কুল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করি আমি। ২০১০ সালে এসএসসি পাস করি। ভালো ফলাফল করায় প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার পাশে দাঁড়ায় মেধা বৃত্তি দিয়ে। ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করি সেখানেও আমি প্রথম আলো ট্রাস্টকে পাশে পেয়েছিলাম। আবারও অদম্য মেধাবী হিসেবে বৃত্তিপ্রাপ্ত হই। সে সময় আমাদের সংবর্ধনার জন্য প্রথম আলোতে যেতে বলা হয়। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসান। তিনি অনুষ্ঠান শেষে তাঁর কার্ড আমাকে দেন। পরবর্তীতে ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতে অনার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দেন তিনি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনার পড়াশোনা কবে শেষ হলো?

লিপি খাতুন: ২০১৬ সালে বিবিএ শেষ করেছি। এমবিএ এখনো করা হয়নি। তবে শেষ করব ইনশা আল্লাহ।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনি চাকরিতে যোগদান করলেন কবে?

লিপি খাতুন: ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ চাকরিতে যোগদান করি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনি ইউনিয়ন সমাজকর্মী হিসেবে কর্মরত আছেন। পড়াশোনা এবং চাকরির এই অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

লিপি খাতুন: পড়াশোনাটা আমার কাছে মূল লক্ষ্য ছিল। তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে আমি পড়ালেখা চালিয়ে গেছি। চাকরির প্রস্তুতিকালীন সময়ে এনজিও’তে কাজ করেছি। চাকরির প্রস্তুতি এবং এনজিও চাকরি এক সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিল। সে সময় এনজিও চাকরিটা ছাড়তে হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

অনেক সময় চলে যাচ্ছিল, কোথাও স্থির হতে পারছিলেন না— হতাশ লাগত কি তখন? ওই সময়টা কাটিয়ে উঠলেন কি করে?

লিপি খাতুন: আমি পুরোপুরিভাবে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে মাথায় চিন্তা ছিল, প্রথম আলো ট্রাস্ট থেকে বৃত্তি পেলাম, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ম্যাডাম আমার জন্য এত কিছু করলেন। কিন্তু আজকে এই অবস্থা কেন হচ্ছে। তবে আল্লাহর প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল— আমি যে পরিশ্রম করেছি, কিছু একটা হবে আশা ছিল। চাকরির পরীক্ষাগুলোতে কোন জায়গা থেকে বাদ পড়ছি ওই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করলে অনেক দূর যেতে পারব— এটা আমার বিশ্বাস ছিল। ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙে গেছি কিন্তু পরক্ষণে আবার নিজেকে রিস্টার্ট করেছি। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে, আমাকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের মান রক্ষা করতে হবে— এটা মাথায় কাজ করত সবসময়।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

সরকারি চাকরিতে যোগদান পরে পরিবারের অনুভূতি কি?

লিপি খাতুন: তারা অনেক খুশি। অনেক দিনের চাওয়া তাদের সাহায্য করব, সেটা এখন করতে পারছি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

পরিবারের সদস্যরা আপনাকে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখে?

লিপি খাতুন: আরও ভালো কিছু করার সবারই ইচ্ছে থাকে, আমার আছে। আমি চেষ্টা করছি আরও ভালো কিছু করার জন্য।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

অদম্যদের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

লিপি খাতুন: আপনারা যে অবস্থায় থাকুন না কেন, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক রেখে পরিশ্রম করতে হবে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই, প্রথম আলো ট্রাস্ট যে সময় এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, আমাকে পথ দেখিয়েছে। তারা না থাকলে হয়তো আজকে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। আপনার জন্য শুভ কামনা।

লিপি খাতুন: আপনাকেও ধন্যবাদ।