সোনালী ব্যাংকে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন, অভিনন্দন আপনাকে। কেমন আছেন আপনি?
অলোক কুমার মাহাতো: ভালো আছি। ধন্যবাদ প্রথম আলো ট্রাস্টকে এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আমার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আজকের এই জায়গায় আসা। সকল সফলতার জন্য এলাকার সকলে অনেক খুশি। আমার এলাকার মানুষের আমাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয়। খুব ভালো লাগে এলাকায়।
ছোটবেলা কেমন ছিল আপনার।
অলোক কুমার মাহাতো: একদম নিভৃত কাদামাখা পল্লিতে বড় হয়েছি। ৪ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে স্কুলে যেতাম। বৃষ্টির সময় আমি একাই স্কুলে যেতাম। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমার গ্রামে কোনো বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেনের আলোয় পড়তাম। বাড়িতে গরু ছাগল পালন থেকে সবই করেছি। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন বাবা মারা যান। এরপর কাকা, মামারা সহযোগিতা করেছেন।
ছোটবেলায় কি স্বপ্ন দেখতেন, কি হতে চাইতেন?
অলোক কুমার মাহাতো: বাবা হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তাই ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতাম শিক্ষক হব। বাবা মারা যাওয়ার পর মনে হয়েছে চিকিৎসক হব। পরে চেষ্টা করেছি তবে চিকিৎসক হওয়া হয়নি। এর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম।
বড় ছেলে চাকরিতে যোগদান করবে, মায়ের অনুভূতি কি এখন?
অলোক কুমার মাহাতো: যেদিন চাকরি ফল প্রকাশ হলো, মা অনেক কান্না করেছে। এটা আনন্দের কান্না। সবাইকে খুশির খবর দিয়েছে। মায়ের মনের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করছে-এটাই আমার কাছে সব।
এখনকার স্বপ্নটা কি আপনার?
অলোক কুমার মাহাতো: ব্যাংকে যেহেতু হলো, চাকরি করার ইচ্ছা আছে। তবে বিসিএসের চেষ্টায় আছি। ৪৫ তম বিসিএসের ভাইভা দিলাম কয়দিন হলো। যা হোক, আমার এলাকায় আমার পঠিত বিষয়ের ওপর কাজ করার ইচ্ছা আছে।
বাবা মারা গেলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়লেন। কখনো কি মনে হয়েছে যে-আর পারব না?
অলোক কুমার মাহাতো: আসলে আমার মা আমাদের তেমনটা বুঝতে দেননি। তা ছাড়া আমার শিক্ষকেরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। এভাবে এসএসসি পাসের পর যখন এইচএসসি ভর্তি হই তখন বেশি আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তখন প্রথম আলোর রায়গঞ্জ প্রতিনিধি আমাদের বাড়িতে আসেন। আমাকে নিয়ে রিপোর্ট করেন। পরে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। এটা আমার জীবনে অনেক বড় পাওয়া ছিল। বৃত্তি পেয়ে আমি এগিয়ে যাওয়ার অনেকটা সাহস পাই। দুশ্চিন্তা কেটে যায়।
এখন যারা অদম্য মেধাবী আছে তাদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
অলোক কুমার মাহাতো: জীবনে বাধা, প্রতিকূলতা আসবেই। এইগুলো নিয়েই জীবন। সাহস নিয়ে এগুলো অতিক্রম করতে হতে। পরিশ্রম ও ধৈর্য-এই দুটা জিনিস নিজের মধ্যে থাকতে হবে। রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করতে হবে। এ ছাড়া নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য অনলাইনে সব ধরনের কোর্স পাওয়া যায়। এগুলো ভালো দিকটা নিতে হবে।
এইচএসসির পর স্নাতকে ভর্তির প্রস্তুতি কিভাবে নিবে? যা হতে চায় সেটার প্রস্তুতি, রুটিন কেমন হওয়া উচিত?
অলোক কুমার মাহাতো: এইচএসসির পর খুব স্ট্রাগলিং পিরিয়ড যায়। প্রথমত, এইচএসসির পরীক্ষাটা ভালো ভাবে দিতে হবে। পরে যে সময় পাওয়া যায়, সেটাকে প্রপার ব্যবহার করতে হবে। আমি কি মেডিকেলে যাব নাকি অন্যকিছু… সেটা ঠিক করে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করে সেটাতে জোর দিতে হবে। টেকনিক্যাল বিষয়ে আগ্রহ থাকলে ভালো। যেমন নার্সিং বা অন্য কিছু। কারণ এগুলো জব পাওয়া যায় অল্প সময়ের মধ্যে। একাডেমিক ফল ভালো করতে হবে। পাশাপাশি টিউশন করা, বিভিন্ন সংগঠন করা-এগুলো নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক।
আর যারা চাকরির প্রস্তুতি নেবেন তারা সিনিয়রদের পরামর্শ নেবেন। বিভিন্ন বইগুলো পড়বেন। আরেকটা বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সময় পেলে ঘুরতে হবে। নিজের মনকে সুস্থ ও ভালো রাখা জরুরি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার সব সুন্দর স্বপ্নগুলো পূরণ হোক।
অলোক কুমার মাহাতো: আপনাকেও ধন্যবাদ।