দৃষ্টিহীন সুবর্ণার স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার

অদম্য মেধাবী সুবর্ণা রানী দাস।

প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় সফলতা অর্জনকারী এক দৃষ্টিহীন অদম্য মেধাবী সুবর্ণা রানী দাস। তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত। তিনি ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করছেন।

সুবর্ণাদের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে। সুবর্ণা রানী জন্মের পর থেকে পৃথিবীর আলো দেখেনি। দুই বছর বয়সে তাঁর বাবা সুভাষ চন্দ্র দাস মারা যান। মা কণিকা রানী বিশ্বাস পড়েন মহা-বিপদে। কোনো উপায় না পেয়ে শুরু করেন কাঁথা সেলাইয়ের কাজ। পরে কাঁথা সেলাইয়ের পাশাপাশি বাসাবাড়িতেও কাজ শুরু করেন। এভাবে চলে তাদের সংসার।

নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুবর্ণা রানী দাস।

পড়ালেখার প্রতি সুবর্ণার প্রবল আগ্রহের কারণে তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর মা। প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন তিনি। মেয়েকে ঠিকমতো খেতে দিতে পারেননি। স্কুল শেষ হলে মেয়েকে শিল্পকলা একাডেমিতে ক্লাসে নিয়ে যেতেন। অনেক দিন দুপুরে খাওয়াও হয়নি। সেই সুবর্ণা ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জেলা শহরের ইয়াছিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে যান। ঐ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ওই স্কুল থেকে একমাত্র সুবর্ণাই জিপিএ-৫ পান।

তাঁর এই সাফল্যের কথা ছাপা হয় প্রথম আলোয়। পরে তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও অদম্য মেধাকে বিবেচনায় নিয়ে দেওয়া হয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ২০২০ সালে রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ থেকে পুনরায় জিপিএ-৫ পান সুবর্ণা। তাঁকে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়েও এই শিক্ষাবৃত্তির আওতায় রাখা হয়েছে।

সুবর্ণা শুরু যে পড়াশোনায় ভালো তা নয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি শিল্পকলা একাডেমি থেকে চার বছর মেয়াদি উচ্চাঙ্গসংগীত প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। আবৃত্তির প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে গান ও কবিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি।

সুবর্ণার স্বপ্ন কি জানাতে চাইলে জানান, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। পড়াশোনা শেষে বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডার হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।’