চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার আজাইপুর গ্রামের ছেলে মো. আব্দুল কাদের। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আব্দুল কাদের সবার বড়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। সবার ছোট বোন পড়াশোনা করছে। বসতভিটা ছাড়া কোন জায়গা জমি নেই তাদের। বাবা রাজমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালাতেন। টানাপোড়েনের সংসারে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। তারপরও থেকে যাননি কাদের। মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন।
পড়াশোনার প্রতি অদম্য ইচ্ছা ও তার পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃত্তি পেয়ে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েv ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর (টেক) ইলেকট্রনিকস হিসেবে কর্মরত। তাঁর এই সফলতার পেছনের নানা গল্প নিয়ে আলোচনা হলো ১২ জুলাই ২০২৩, বুধবার, বেলা ৩ ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।
‘অনেক বাধা এসেছে, অতিক্রম করেছি। সব সময় সৎ সাহস, বিশ্বাস ও মনোবল ছিল,—তাই পেরেছি।’
ছোটবেলার থেকে আজকের শিক্ষক হয়ে ওঠার গল্প বলেতে গিয়ে আব্দুল কাদের বলেন, ‘ছোট থেকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। ব্র্যাকের স্কুলে পড়তাম। অনেক ধরনের কার্যক্রম ছিল, ওগুলো খুব ভালো লাগত। পরে স্কুল, কলেজ পাস করলাম। ২০১০ সালে প্রথম আলোর সঙ্গে পরিচয়, যখন এসএসসি পাস করি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন দিলু চাচা আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করেন। আমাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। আসলে একজন শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি দুরবস্থায় থাকে অষ্টম থেকে এইচএসসি পর্যন্ত। আমাদের মতো অসচ্ছল পরিবারের যারা তাদের অনেকেরই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় অর্থাভাবে। সেই সময়টাতে সাপোর্ট দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ তাদের। এখন আমার ইচ্ছা, আমিও অনেকের পাশে দাঁড়াব। এভাবেই পরিবার, সমাজ ও দেশ পরিবর্তিত হবে।’
পরক্ষণে আরও যুক্ত করে বলেন, ‘আমার মনে আছে, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি—সব মিলিয়ে ২৮টা টিউশনি করেছি। যতটুকু পারতাম বাড়িতে খরচ পাঠাতাম। যদিও বাবা কখনো চাইতো না। শুধু একবার বলেছিলেন টাকা পাঠাতে। আমি যখন বাড়ি আসার জন্য বাসে উঠতাম, বাবা এসে হাতে যা পারতেন তাই দিতেন।’ বাবার কথা মনে পড়তে চোখ ভিজে উঠে কাদেরের। ২০২১ সালের এ মাসেই (জুলাই) তাঁর বাবা মারা যান।
এখন স্বপ্ন কি? এর উত্তরে আব্দুল কাদের বলেন, ২০২১ সালে জুলাইয়ে বাবা মারা যান। এখন পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব আমার। সবার দায়িত্ব নিয়েছি। সব সময় যেন দায়িত্ব পালন করে যেতে পারি, পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারি—এটাই স্বপ্ন আমার।’
প্রতিকূলতা, বাধা অতিক্রম করার শক্তিটা কি ছিল? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেক বাধা এসেছে, অতিক্রম করেছি। সব সময় সৎ সাহস, বিশ্বাস ও মনোবল ছিল—তাই পেরেছি।’
এখন যারা অদম্য মেধাবীরা আছে তাদের জন্য আব্দুল কাদেরের পরামর্শ হলো, ‘মনকে শক্ত করতে হবে। বাবা-মায়ের কোনো কথায় রাগ করা যাবে না। তাঁরা সর্বোচ্চটা করতে চেষ্টা করেন। সব সময় নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। মনে রাখবে, তোমার এগিয়ে আসা মানে প্রতিটি পরিবার এগিয়ে আসা। তোমরা ভালো কিছু কর এই প্রত্যাশা করি। আমার জন্যও দোয়া করবে, যেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি।
সবশেষে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। জানি না কতটা দিতে পেরেছি। তবে সব সময় চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার।’