অদম্য মেধাবী মো. আব্দুল কাদের। বাড়ি তাঁর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার আজাইপুর গ্রামে। বসতভিটা ছাড়া কোনো জায়গা জমি নেই তাদের। বাবা রাজমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালাতেন। এদিকে তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আব্দুল কাদের সবার বড়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। সবার ছোট বোন পড়াশোনা করছে। বড় পরিবারে শুধু বাবার একার আয়ে চালানো কঠিন ছিল। তা ছাড়া টানাপোড়েনের সংসারে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল আরও কঠিন। তারপরও পড়াশোনার পথ থেকে সরে যাননি কাদের। মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন। সেই কাদের এখন নওগাঁর পোরশায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ৪১ তম বিসিএসে গেজেটভুক্ত হয়ে ২৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে এ পদে যোগদান করেন তিনি। এর আগে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর (টেক) ইলেকট্রনিকস হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পরিবারের অসচ্ছলতার মধ্যেও একান্ত নিজের ইচ্ছায় এগিয়েছেন আব্দুল কাদের। প্রতিকূলতার মধ্যেও এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাঁর ভালো ফল, পড়াশোনার প্রতি অদম্য ইচ্ছা ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল’ থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃত্তি পেয়ে এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।
অনুভূতি প্রকাশ করে আব্দুল কাদের বলেন, ‘ছোট থেকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। ব্র্যাকের স্কুলে পড়তাম। অনেক ধরনের কার্যক্রম ছিল, ওগুলো খুব ভালো লাগত। পরে স্কুল, কলেজ পাস করলাম। ২০১০ সালে প্রথম আলোর সঙ্গে পরিচয়, যখন এসএসসি পাস করি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন দিলু চাচা আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করেন। আমাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। আসলে একজন শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি দুরবস্থায় থাকে অষ্টম থেকে এইচএসসি পর্যন্ত। আমাদের মতো অসচ্ছল পরিবারের যারা তাদের অনেকেরই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় অর্থাভাবে। সেই সময়টাতে সাপোর্ট দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ তাদের। এখন আমার ইচ্ছা, আমিও অনেকের পাশে দাঁড়াব। এভাবেই পরিবার, সমাজ ও দেশ পরিবর্তিত হবে।’