এইচএসসিতেও সাফল্য ধরে রেখেছে তারাগঞ্জের মফিজার

অদম্য মেধাবী মফিজার রহমানের সাফল্যে এক প্রতিবেশী মিস্টি খাওয়াচ্ছেন।

এইচএসসিতেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যহৃত রেখেছে অদম্য মেধাবী মফিজার রহমান। এসএসসিতেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তখন কথা দিয়েছিলেন এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাবেন, পেয়েছেনও। ওই অদম্য মেধাবীর বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কিসামত মেনানগর বড়বাড়ি গ্রামে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পরে তাকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল।

শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কিসামত মেনানগর বড়বাড়ি গ্রামে মফিজার রহমান দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। আবাদি কোনো জমি নেই। সহায় সম্বল বলতে বসতভিটের দেড় শতক জমির ওপর একটি টিনের দোচালা ঘর। মফিজারের বাবার রিকশার চাকা ঘুরলে পরিবার সবার মুখে জোটে ভাত, না হলে অনাহারে দিন কাটে। চার বছর আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মফিজারের বাবা আমিনুর রহমান কোমরে আঘাত পায়। এরপর থেকে তেমন রিকশা চালাতে পারেন না। তাঁর বৃদ্ধ দাদা কিনা মামুদ প্যারালাইসড। লেখাপড়ার খরচ ও সংসার ব্যয় মেটাতে স্কুল ছুটির পর ও বন্ধের দিন মফিজার রহমান রিকশা চালাতেন। মফিজার রহমান ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষা ডাঙ্গীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

এইচএসসিতেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যহৃত রেখেছে অদম্য মেধাবী মফিজার রহমান।

২০২২ সালের ৫ মার্চ ‘প্রতিকূলতা ওদের দমাতে পারেনি’ শিরোনামে মফিজার রহমানকে নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর মফিজার রহমানের লেখাপড়ার জন্য ব্র্যাক ব্যাংক- প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। মফিজার এবারে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর এক বোন আরমিনা খাতুন নবম শ্রেণি ও আরেক বোন লাকী আক্তার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

মফিজার রহমান বলেন, ‘অনেক কষ্টে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। কলেজে ভর্তির টাকা ছিল না। লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি ও আমার পরিশ্রমে আজকের এই সাফল্য। আমি লেখাপড়া শেষ করে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করতে চাই।’

 মফিজারের বাবা আমিনুর রহমান বলেন, ‘ছেলেটা এবারও ভালো ফলাফল করছে। সউগ প্রথম আলোর তকনে। প্রথম আলোর শিক্ষাবৃত্তি না হইলে তো ওক পড়ারে পানু না হয়। ওমার প্রতি মুই সারা জীবন কৃতজ্ঞ।’