স্কুল থেকে দুপুরে বাড়িতে গেলে ভাত পাওয়া যাবে, এমন নিশ্চয়তা ছিল না পীরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর মৌজার দেওয়ান মো. নাফিস ইকবালের। তাই তিনি টিফিনের সময়টা নলকূপের পানি খেয়েই কাটিয়ে দিতেন স্কুলে। সকালে নামমাত্র আহার মুখে দিয়ে স্কুলে গিয়ে অনাহারে অর্ধাহারেই দিন কেটে যেত তাঁর। অভাব ছিল যাঁর নিত্য সঙ্গী, সেই নাফিজ ইকবাল এখন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ২০২১-২২ সেশনে রুয়েটে পড়ার সুযোগ করে নিয়েছেন।
২০১৫ সালের দিকে নাফিস ইকবালের বাবা মামুনুর রশিদ তার মাকে ছেড়ে ঢাকায় চলে গিয়ে নতুন সংসার গড়েন। একমাত্র উপার্জনক্ষম লোকটি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর দুই ছেলেকে নিয়ে বিপদে পড়ে যান মা মোছা. নাসরিন। অভাবের সংসার চালাতে তার মা একটি হারবাল ওষুধের দোকানে তিন হাজার টাকা বেতনে বিক্রয়কর্মীর চাকরি নেন। এত অল্প আয়ে সংসার চলে না বিধায় পড়াশোনার পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণি থেকেই প্রতিবেশী ৬-৭ শিক্ষার্থীকে সকাল-বিকেল প্রাইভেট পড়াতেন নাফিস। বলছি পীরগঞ্জ পৌরসভার রঘুনাথপুর (কলেজ বাজার) মৌজার অদম্য মেধাবী নাফিস ইকবালে গল্প।
গল্প এখানেই শেষ নয়। পরের গল্পটা থামার নয়, এগিয়ে যাওয়ার। অসচ্ছলতার বাধা পেরিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে ২০১৯ সালে পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান। প্রথম আলোর পীরগঞ্জ প্রতিনিধি কাজী নুরুল ইসলাম নাফিজ ইকবালকে নিয়ে নিউজ পাঠান। পরে পড়াশোনার প্রতি তাঁর এই অদম্য ইচ্ছা ও মেধা শক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পুনরায় সাফল্য ধরে রাখেন। তাঁকে পুনরায় স্নাতক পর্যায়েও ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। এই বৃত্তি সহায়তায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন নাফিজ। ভবিষ্যতে আইটি খাতের বিশেষজ্ঞ হতে চান নাফিজ।