শূন্য থেকে আবার শুরু, এখন সরকারি স্কুলের শিক্ষক আসমা

ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় আসমা আক্তার।

সাইক্লোন সিডরে সব হারান আসমাদের পরিবার। এমনিতেও তাঁদের পরিবার ছিল অসচ্ছল। বাবা মাছ ধরে সংসার চালাতেন। তিন ভাই-বোন বাবা-মা নিয়ে বড় সংসার। বাবার সামান্য আয়ে কোনোমতে চলত পরিবার। কিন্তু ২০১১ সালে তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোন কাজ করতে পারেন না। তখন আসমার ছোট ভাই শ্রমিকের কাজ করে সংসার টেনে নেয়। বলছিলাম ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় আসমা আক্তারের কথা।

পরিবারের বড় সন্তান আসমা অভাব অনটনের মধ্যেও ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। উত্তীর্ণ হন জিপিএ-৫ পেয়ে। ভালো ফল করেও পরিবারে আনন্দ ছিল না। কলেজে পড়তে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে ছিল সংশয়। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না আসমা। ওই সময়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধি তাঁদের বাড়িতে যান। তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়। পরে তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও অদম্য মেধাকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় ২০১০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও সাফল্য ধরে রাখেন তিনি। জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পুনরায় তাঁকে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষাবৃত্তির জন্যও নির্বাচন করে তহবিল। তিনি পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি পটুয়াখালীর কলাপড়া উপজেলার নাচনাপাড়া বাসন্তী মণ্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

আসমা বলেন, ‘ছোটবেলার গল্প যাত্রাটা একটু কঠিন ছিল আমার জন্য। যেহেতু বাবা একজন জেলে, মাছ ধরে সংসার চালান। আমি পড়াশোনা ভালো ছিলাম। ২০০৭ এ সিডরে সব হারাই আমরা-ঘর, বই-খাতা কিছুই ছিল না। তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। এর মধ্যেও জিপিএ-৫ পাই। তখন বাবা চিন্তা করেন-আমাকে পড়াশোনা করাবেন কিনা। কারণ অনেক খরচ হবে। তারপর আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রথম আলোর একজন সাংবাদিক আমাদের বাড়িতে আসেন। আমাকে নিয়ে নিউজ করেন এবং বৃত্তির ব্যবস্থা হয়। সেই টাকায় আমি এইচএসসি পড়াশোনা করে আবার জিপিএ-৫ পাই। আমাকে স্নাতক পর্যায়েও বৃত্তি দেওয়া হয়। প্রথম আলো আমার পাশে থেকে আমার এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করেছে। যার কারণে চাকরি করে পরিবারে সাপোর্ট করতে পারছি।’