পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার অদম্য মেধাবী মো. ফেরদাউস ইসলাম শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প। ছোট থেকে নানা প্রতিকূলতা দেখেছেন তিনি। সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। তাঁর জীবনের নানা গল্প উঠে আসে ১১ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে। তিনি ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
২০১২-১৩ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসিতে ভর্তি হন। বিভাগ মনঃপূত না হওয়ায় পরের বছর আবার পরীক্ষা দিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে সুযোগ পান। এই বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে এ বছর বাংলাদেশ পুলিশে উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। আশা করেন, এখান থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন।
বেড়ে ওঠার গল্পটা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি ছিলাম তিন ভাইয়ের মধ্যে মেঝো। বাবা রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন (২০২১ সালে আগস্ট মাসে বাবা মারা যান)। মা গৃহিণী ছিলেন। রিকশা চালানোর আয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। এর মধ্যে তিন ভাইয়ের পড়াশোনা। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে প্রথম ছিলাম আমি। উপজেলা সদর থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। আমার এই সফলতার খবর প্রথম আলোর প্রকাশ করে। আমাকে শিক্ষাবৃত্তির আওতায় নেয়। এই বৃত্তি না পেলে আমার পড়াশোনা চালানো হয়তো সম্ভব হতো না। রিকশা চালিয়ে বাবা কতটুকুই বা সাপোর্ট দিতে পারতেন। এ সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ফেরদাউস।... আমি হয়তো বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছি। কিন্তু এই সফলতা আমাকে কাঁদায়। কারণ সুখবরটা বাবা দেখে যেতে পারলেন না। এর আগেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।’
পরক্ষণেই বলেন, ‘বাবার পরিশ্রম ও কষ্টের কথা চিন্তা করে কোনো প্রাইভেট পড়িনি। গরিব হলেও তো দিতে হবে স্যারদের। বাবার কষ্টের দিয়ে প্রাইভেট পড়ব —এটা চিন্তাই করতে পারিনি। তাই নিজে নিজেই সব নোট তৈরি করেছি। তা ছাড়া গ্রামে বর্ষাকালে রিকশা চালানো কঠিন, রাস্তাঘাট ভালো না। আবার দিনমজুরি কাজও তেমন থাকে না। তাই দিনের কামাই দিনেই শেষ হতে যেত।’
২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার পাশে ছিল। বাবা হয়তো এ জন্য সাহস পেয়েছিলেন পড়াশোনার করানো। নয়তো আমাকে বাবার মতো কাজে যেতে হতো।এ জন্য সব সময় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি।’
‘আমরা যারা নিজের চেষ্টায় এই পর্যন্ত এসেছি তাদের মূল বাধা ছিল অর্থনৈতিক দূর্বলতা। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট আমাদের পাশে থাকার কারণে সেই দুর্বলতা কেটে গেছে। তাই একটা কথাই বলব —যার যার স্বপ্ন পূরণে স্থির থাকতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে —এর বিকল্প নেই।’
পুলিশ প্রশাসনে আসার পেছনে একটা গল্প আছে তাঁর। ছোট সময়ে গ্রামের সাইক্লোন সেল্টারেরে নিচে বেড়া দিয়ে স্কুলে চলত। ঐ স্কুলেই তিনি পড়তেন। গ্রামের বখাটেরা স্কুলে বেড়া কেটে ভেতরে যেত এবং বিভিন্ন মাদক সেবন করত। তাদের এই অবৈধ কাজে বাধা দিতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হন ফেরদাউস। তখন জেদ চেপে বসে তাঁর প্রশাসনে যাওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই তিনি আছেন। তাঁর মতে, প্রশাসনে থাকলে মানুষের পাশে থাকার অবারিত সুযোগ থাকে। সেই সুযোগে মানুষের জন্য কিছু করতে চান তিনি।
অন্যান্য অদম্যদের উদ্দেশে ফেরদাউস বলেন, ‘আমরা যারা নিজের চেষ্টায় এই পর্যন্ত এসেছি তাদের মূল বাধা ছিল অর্থনৈতিক দূর্বলতা। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট আমাদের পাশে থাকার কারণে সেই দুর্বলতা কেটে গেছে। তাই একটা কথাই বলব —যার যার স্বপ্ন পূরণে স্থির থাকতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে —এর বিকল্প নেই।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন এই অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।