নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্ম নেওয়া অদম্য মেধাবী হৃদয় চন্দ্র দাস। অভাব তার প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান তিনি। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হবিগঞ্জ থেকে এবার এমবিবিএস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও এমবিবিএস পাস করায় বাবা-মা, ভাই, আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসীর মধ্যে বইছে এখন খুশির ঝিলিক। জীবনের প্রথমবারের মতো এই গ্রামের এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ায় গ্রামবাসীরা আনন্দে উচ্ছ্বাসিত। হৃদয় এখন গ্রামবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের শরিশ্যাম গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হৃদয় চন্দ্র দাসের চার ভাইয়ের মধ্যে সে সর্ব কনিষ্ঠ। ২০১৫ সালে ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে বাদশাগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও অদম্য ইচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে ‘ব্র্যাক ব্যাংক–প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ প্রদান করা হয়। বৃত্তি সহায়তায় ২০১৭ সালে ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান। ২০১৭-১৮ সেশনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে হবিগঞ্জে অবস্থিত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ভর্তির সুযোগ পান। পরে তাঁর এমবিবিএস পড়াশোনার জন্যও পাঁচ বছর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে ব্র্যাক ব্যাংক–প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। এ বছর তিনি এমবিবিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করেছেন। এখন ইন্টার্নশীপ করবেন।
হৃদয়ের বাবা বিনোদ চন্দ্র দাস উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজারে ইস্ত্রির দোকান চালাতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দুই বছর আগে সেই ব্যবসা তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। মা মীনা রানী সরকার গৃহিণী। পরিবারের সবার বড় ভাই সেন্টু চন্দ্র দাস (৩৫) অসুস্থ। হৃদয়ের বড় অন্য দুই ভাই রনি কুমার দাস (৩২) ও মিন্টু চন্দ্র দাসের (২৭) আয়ের ওপর চলছে পুরো সংসারের খরচাপাতি।
হৃদয় চন্দ্র দাস (২৫) বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের আমার জন্ম। ২০১৫ সালে এসএসসি পাস করার পর থেকেই প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার পাশে ছিল। ‘ব্র্যাক ব্যাংক–প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ না পেলে আমি উচ্চশিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত হতাম। এই সহায়তা পেয়েছি বলেই আমি এত দূর এগিয়ে আসতে পেরেছি। নতুবা এই লম্বা জার্নিটা করা আমার পক্ষে কোনো অবস্থাতেই সম্ভব হতো না। আমি আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকের কাছেও চিরঋণী। এখন বিসিএস পাস করার যুদ্ধে নামব। ভবিষ্যতে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছে আছে। মানুষের সেবায় জীবনকে উৎসর্গ করতে চাই।’
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এটি হাওরবেষ্ঠিত উপজেলা। এখান থেকে দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রথম আলোর ট্রাস্ট্রের সহায়তায় একজন এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গৌরবের ও প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা এই কাজটিকে সাধুবাদ জানাই।
শরিশ্যাম গ্রামের বাসিন্দা মো. বেলায়েত হোসেন (৩৫) বলেন, হৃদয় চন্দ্র দাস আমাদের এলাকাবাসীর গর্ব ও অহংকার। জীবনের প্রথমবার আমাদের গ্রাম থেকে একজন এমবিবিএস ডাক্তার হয়েছে। হৃদয় চন্দ্র দাস এখন গ্রামবাসীর হৃদয়ে হৃদয়ে।
হৃদয়ের বাবা বিনোদ চন্দ্র দাস ও মা মীনারানী সরকার বলেন, ‘আমাদের পরিবারের ছোট ছেলেডা ডাক্তারি পরীক্ষায় পাস করছে। যারা তার স্বপ্নডা পূর্ণ করছইন,তারারবেহের কাছে আমরা চিরঋণী।’