সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে ইমাম হোসেনের বাড়ি। চার ভাইবোন, মা-বাবাসহ ছয়জনের পরিবার। কিন্তু একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন রাজমিস্ত্রি বাবা দিনিয়ার আলী গাজি। বাবার আয় ছিল খুবই সীমিত, যা দিয়ে কখনোই সবার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হতো না। বড় ভাই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর অভাবের কারণে আর এগোতে পারেননি। বাবার কষ্ট কমাতে সংসারের হাল ধরতে হয় ইমাম হোসেনকে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি তিনিও কাজ করতেন। কিন্তু নিজের স্বপ্নের জায়গা থেকে পিছপা হননি ইমাম। শত কষ্টের মধ্যেও অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। পরে প্রথম আলোতে তাঁর জীবনসংগ্রামের কথা ছাপা হয়। দেওয়া হয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি। এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে ডিপ্লোমা কোর্সের পুরো চার বছর পড়াশোনা করেন এবং সুনামের সহিত পাস করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ফরিদপুরে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত।
আজকের এই ইমাম হোসেন হওয়ার পেছনের গল্পটা কী, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবনের জার্নিটা খুবই কষ্টের। ২০০১ সালে আমার দাদি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করায় আমাকে। দাদির হাত ধরেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। পরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হয় বেশ দূরের একটা স্কুলে। তখন থেকেই সংগ্রামের শুরু। স্কুলে যেতে প্রতিদিন তিন টাকা ভ্যানভাড়া লাগত। সেটাও দেওয়া সম্ভব হতো না, হেঁটেই স্কুলে যেতাম। কারণ, রাজমিস্ত্রি বাবার পক্ষে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে যেত। আমার বড় ভাইও আমার চেয়ে ভালো ছাত্র ছিল। অভাবের কারণে তিনিও পড়াশোনা করতে পারেনি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সংসার চালাতে বাবাকে সহায়তা করার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে কাজে নামেন তিনি।’
পরক্ষণে ইমান যোগ করে বলেন, ‘এত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি যে পারব, এই সাহসটা আমার ছিল। সেই সাহস নিয়েই নবম ও দশম পার হয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। মজার বিষয় হলো, গ্রামের প্রথম জিপিএ-৫ ছিল এটা। ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে পারা যায়, তার উদাহরণ আমি।’
চাকরি পাওয়াতেও রাখলেন সাফল্যের স্বাক্ষর। জীবনের প্রথম চাকরি পরীক্ষাতেই টিকে যান। ৯৬ জনের মধ্যে ৯ জনকে টেকানো হয়। এই ৯ জনের একজন ছিলেন তিনি। এখন নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারের খরচ চালান তিনি। ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ দেন। এই গল্পগুলো আশাজাগানিয়া গল্প, সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।