‘পড়াশোনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না’

হাজিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের (চাঁদপুর) আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক অদম্য মেধাবী সাব্বির আহমেদ।

অদম্য মেধাবী সাব্বির আহমেদের ছয় মাস বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। মা ছিলেন গৃহিণী। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। নানার বাড়িতে থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বৃত্তির জন্য আবেদন করেন প্রথম আলো ট্রাস্টে। পরে তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও অদম্য মেধাকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পুনরায় শিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখা হয়। বৃত্তি সহায়তায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি হাজিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের (চাঁদপুর) আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।

সফলতার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ছোট থেকে প্রতিকূল পরিবেশে বড় হয়েছি। ছয় মাস বয়সে বাবা মারা যায়, মা অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে বোর্ডের বৃত্তি পেয়েছি। গ্রামের একটা ছেলে, যে জগৎ সম্পর্কে খুব কম জানে, তাকে অনেক বাধা পেরোতেই হয়। আমার পারিবারিক অবস্থা শিক্ষকেরা জানতেন। তা ছাড়া ভালো ফল করায় আমার এক শিক্ষক প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়, বৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয় এবং ঢাকায় ডাকা হয়। ঢাকায় প্রোগ্রামে এসে দেখি জগৎটা অনেক বড়। তখন মনে হয়েছে, আমি অনেক কিছু পারব। ২০১০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পরে ২০১২ সালে স্নাতক পর্যায়েও আমার পাশে পাই ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টকে।’

টানাপোড়েনের সংসারে সফল হলেন কীভাবে, অনুপ্রেরণাটা কি ছিল? এই প্রসঙ্গে সাব্বির বলেন, ‘আমাদের সমাজে যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের অনেক অবহেলার শিকার হতে হয়। এমন অবস্থায় আমার মনে হয়েছে, একমাত্র পড়াশোনা করেই বড় হতে হবে। এগিয়ে যেতে হলে পড়াশোনা করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না আমার। এ ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তিটাই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।’

ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আইসিটি তথা তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সাব্বির আহমেদ স্বপ্ন দেখেন তাঁর গ্রামের তরুণদের কম্পিউটার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা। তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে আয় করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে তাঁর। সে জন্য একটা সেন্টার দেওয়ার ইচ্ছা আছে। ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন।