তিন বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন মোকলেছুর রহমান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় হারিয়েছেন বাবাকে; কিন্তু শিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ধওলাই এলাকার বাসিন্দা মোকলেছুর বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন।
জীবন চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছেন মোকলেছুর রহমান। তিন বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অনিশ্চিত জীবনের পথে পা বড়ান তিনি। সংকটকালীন সময়ে সহযোগিতার হাত বড়িয়ে দেয় তাঁর চাচা মতিয়ার রহমান। চাচার সহযোগিতায় ঢাকার জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশেন থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। মোকলেছুর রহমানের বাবা আনোয়ার হোসেন পেশায় ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। তাঁর একার আয়ে ছয় সদস্যের পরিবারটি চলতো। কিন্তু অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারিয়ে আবারও সংকটে পড়েন মোকলেছুর। সেই সময় পরিবারের হাল ধরে তাঁর মা মনোয়ারা। ঢাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে দারিদ্রতা ও নিজের দৃষ্টিহীনতার সঙ্গে কঠিন সংগ্রাম করে পড়ালেখা চলিয়েছেন মোকলেছুর। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। ২০১৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষাতেও ঢাকা কলেজ থেকে জিপিএ–৫ পান তিনি। ভালো ফলের ধারাবাহিকতা বাজায় রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন মোকলেছুর। বর্তমানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। অদম্য ইচ্ছা ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে মোকলেছুর রাহমানকে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়।
নিজের জীবন সংগ্রাম প্রসঙ্গে মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘‘জীবন চলার পথে সবকিছুকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ও জানতে হবে তাহলে সফল হওয়া সম্ভব। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকলে ভালো ফল আসবে। মায়ের সংগ্রামী জীবন আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ‘ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি’ আমার চলার পথকে সহজ করেছে। আমি মনে করি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী এখন পর্যন্ত ইতিবাচক নয়। এর পরিবর্তন করতে হবে।’’