দৃষ্টিহীন পাপ্পু পেলেন ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি

মা–বাবার সঙ্গে পাপ্পু।

পাপ্পু দৃষ্টিহীন হলেও অদম্য শক্তি তাঁর অফুরান। তাঁর এই অদম্য শক্তির সংবাদ ছাপা হয় ১৭ জুলাই প্রথম আলোয় । পরে তাঁর এই অদম্য ইচ্ছা ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা হয়। তিনি স্নাতক (সম্মান) পর্বের চার বছর এই তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাবেন।

প্রথম আলোর নাটোর প্রতিনিধির তথ্যমতে, মাত্র তিন মাস বয়সেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার পাপ্পু কুমার পাল। এরপর পাপ্পুর চিকিৎসার জন্য দেশ-বিদেশে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছে তাঁর পরিবার। তবে পাপ্পু হারানো দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে পাননি।

পড়াশোনা কীভাবে চালবে তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে চলার পথ মসৃণ হয়ে গেল। এখন স্বপ্নপূরণে আমি এগিয়ে যেতে পারব।

ছয় বছর বয়সে পড়ালেখা শুরু করেন পাপ্পু। পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে পড়ালেখায় নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মায়ের কাছ থেকে পড়া শুনে শুনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন পাপ্পু।

পাপ্পুর মা ভারতী বলেন, জুয়েলারির কাজ করে তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আশায় চিকিৎসার জন্য সব সম্পত্তি শেষ হয়ে গেছে। তবে পাপ্পুর পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়, সে জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। সর্বশেষ এইচএসসি পরীক্ষায়ও পাপ্পু মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

পাপ্পুর মা বই পড়ে শোনান আর পাপ্পু তা শুনে মনে রাখেন।

পাপ্পু সিংড়া উপজেলার কলম গ্রামের বিমান কুমার পালের একমাত্র ছেলে। বিমান পাল সোনার গয়নার কারিগর। তিনি বলেন, জন্মের সময় থেকে পাপ্পুর চোখ দিয়ে সব সময় পানি পড়ত। ছোট বয়সেই তিনি অন্ধ হয়ে যান। পরে দেশের চিকিৎসকদের পাশাপাশি ভারত ও নেপালে গিয়েও ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হয়নি। তবে চিকিৎসকেরা পাপ্পুর পরিবারকে জানিয়েছেন, যেকোনো সময় পাপ্পুর দৃষ্টি ফিরে আসতে পারে। সেই অপেক্ষায় আছে তারা।

পাপ্পু বলেন, ‘২০২১-২২ সেশনে সিংড়া গোল-ই আফরোজ সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু পড়াশোনা কীভাবে চালবে তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে চলার পথ মসৃণ হয়ে গেল। এখন আমি আমার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যেতে পারব। এখান থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে একই বিষয়ে বিসিএসদিয়ে শিক্ষকতা পেশা যেতে চাই আমি।’