জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে উম্মে সালমা। পাঁচ বোনের মধ্যে চতুর্থ তিনি। বাবা আব্দুল হামিদ অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতো। মা আনোয়ারা বেগম গৃহিণী। জমাজমি বলতে শুধু বসতভিটা ছিল তাদের। অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী। টানাপোড়েনের সংসারে অল্প বয়েসেই চারজনের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। শুধু থেকে যান সালমা। তারও বিয়ের কথাবার্তা হয়েছে তাকে নিয়ে, তবে পড়াশোনায় বেশ ভালো হওয়ায় এবং শিক্ষকদের সহায়তায় সে পথে যেতে হয়নি। তবে ২০০৫ সালে হঠাৎ বাবা মারা যাওয়া আরেকটা ধাক্কা আসে। সালমা তখন অস্টম শ্রেণিতে পড়ছেন। সংসার কীভাবে চলবে, আর পড়াশোনা করতে পারবেন কিনা—এ ধরনের সংশয় পেয়ে বসে তাঁর।
এত চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও দমে যাননি সালমা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েও আনন্দ ছিল না পরিবারে। কারণ ভর্তি হতে পারবেন কিনা— এমন দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। তখন প্রথম আলোর প্রতিনিধি তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন করেন প্রথম আলোয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে দেওয়া হয় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি।
বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করে বগুড়া নার্সিং কলেজ থেকে ২০১৪ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। পরে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড মেডিকেল টেকনোলজি নামক একটা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নার্সিং বিভাগে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ২০১৬ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে যোগদান করেন। বর্তমানে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত।
চাকরিতে প্রবেশের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ২০২৩ সালে বিএসসি ইন নার্সিং সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিএইচ পড়াশোনা করছেন তিনি।
সালমা জানালেন, ‘এখন মাকে আমার কাছে রাখি। ছোট বোনের স্বামী গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাওয়ার পর ২ সন্তান নিয়ে বিপদে পরেছে, যতটুকু পারি তাদের সাপোর্ট করি। বোনদের মধ্যে একমাত্র আমিও পড়াশোনা করতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে অনেকের অবদান আছে। তাই আমিও মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমার পেশাটাই সেবামূলক। এই পেশায় থেকে মানুষের সেবা করতে পারছি, এতেই আমার আনন্দ। আমার এই পেশায় নিজের সর্বোচ্চটা দিতে চাই।’