‘শিক্ষাবৃত্তিই আমার গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পথকে সুগম করেছে’

অদম্য মেধাবী নুরজাহান আক্তার।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার কৃষ্ণপুর দালালীপাড়া গ্রামের মেয়ে নুরজাহান আক্তার। বাবা ভ্যানচালক। বাবার অল্প আয়ে সংসার চালানো কঠিন। একদিকে দারিদ্র্যের কশাঘাত,অন্যদিকে মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে সামাজিক নানা প্রতিকূলতা। এ সবের মধ্যেও পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহ তাঁকে দমে যেতে দেয়নি। শক্ত মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন, এখনো যাচ্ছেন। গত বছর নুরজাহান দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছেন। এখন স্নাতকোত্তর শেষ পর্বে আছেন। ২০২৫ এর মাঝামাঝিতে স্নাতকোত্তর শেষ হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর এই এগিয়ে যাওয়ার সহযাত্রী ছিল ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। তাঁকে এইচএসসি ও স্নাতক পর্বে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে এই তহবিল।

নুরজাহান জানালেন, আমিই পরিবারের প্রথম গ্র্যাজুয়েট করা নারী। আমার এই  প্রথম গ্র্যাজুয়েট জার্নিটা সহজ ছিল না। সহজ করে নিতে হয়েছে। আমার বয়স যখন ৪ বছর তখন বাবার ব্যবসায় লস হয়েছিল। তখন আমাদের বাড়ি, জায়গা সব বিক্রি করে ব্যবসার ঋণ পরিশোধ করে। কুড়িগ্রাম সদর থেকে একটু দূরে জমি কিনে টিনের বাড়ি করে। বাবা আবার বিস্কুট, চানাচুরের বিজনেস শুরু করে। ২০১১ সালে, আমি যখন জেএসসি পরীক্ষা দেব, তখন আমাদের পরিবারে আবার বিপর্যয় নেমে আসে। বাবার বিজনেসে লস হয়েছিল, আমাদের বসতবাড়ির জায়গায় ৫ শতক জমি রেখে বিক্রি করে, তখন পরিবারে ভরণ পোষণ, দুই ভাইবোনের পড়াশোনা আমার বাবার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তখন আমার এক চাচার সাহায্যে ভ্যানগাড়ি চালানো শেখেন বাবা। এভাবে চলে আমাদের পরিবার। আর প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার জীবনে চলার পথের পাথেয় হিসেবে এসেছে। শিক্ষাবৃত্তিই আমার গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পথকে সুগম করেছে।’

অদম্য মেধাবীদের পরামর্শ দিয়ে নুরজাহান বলেন, ‘প্রথম থেকেই সময়টা কাজে লাগাতে হবে। ইংরেজি ভাষা ও কম্পিউটারের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমার যেহেতু সংগ্রাম করে বড় হয়েছি, সেহেতু সময়টা কাজে লাগতে হবে। তানা হলে পিছিয়ে পড়তে হবে।’