পরীক্ষায় প্রথম হয়ে প্রভাষক পদে যোগ দিলেন অদম্য রায়হান

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়ে প্রভাষক পদে যোগ দিয়েছেন অদম্য মেধাবী রায়হান আজাদ।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া গ্রামে অদম্য মেধাবী রায়হান আজাদ। তার বাবা ফজল রহমান পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। জমাজমি কিছুই নেই তাদের। সরকারি খাস জমিতে থাকেন। অসচ্ছল পরিবারের সন্তান রায়হান আজাদ ৬ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। বড় দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ছোট দুই ভাই পড়াশোনা করছে। বর্তমানে বাবা বৃদ্ধ, মা গৃহিণী। বড় এক ভাইয়ের ব্যবসায় তাদের সংসার চলে। এমন অসচ্ছলতার মধ্যেও রায়হান ধানগড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হয় ২০১৪ সালে।

রায়হানের মেধা, পড়াশোনার প্রতি অদম্য ইচ্ছা ও পারিবারিক অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে তাকে দেওয়া হয় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি। এই বৃত্তির সহায়তায় এইচএসসি পর্যায়েও সাফল্য ধরে রাখেন রায়হান। পরে তাঁকে স্নাতক পর্যায়েও ৪ বছর শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয় এই তহবিল থেকে। রায়হান ২০১৬-২০১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। এখানে থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে সম্প্রতি নিজের স্বপ্নের পেশা শিক্ষকতায় প্রবেশ করেছেন তিনি।

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়ে প্রথম চাকরি পাওয়ার অনুভূতির কথা জানালেন রায়হান নিজে। একই সঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়া জানালেন এভাবে—

অন্য একটি চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে প্রথম গিয়েছিলাম। প্রথম দেখাতেই কলেজের অবকাঠামোগত সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা দেখে মুগ্ধ হই। গত ১২ আগস্ট ২০২৫ একটি পত্রিকায় এই কলেজের প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেখে পুলকিত মনে আবেদন করি এবং প্রস্তুতি শুরু করি। এরপর লিখিত পরীক্ষার সিট প্ল্যানে যখন দেখি ২টি পদের বিপরীতে আবেদন করছেন মোট ১২৬ জন নিয়োগ প্রত্যাশী, তখন একটু ভড়কে যাই।

মনে সাহসের সঞ্চার করে লিখিত পরীক্ষায় বসি এবং ভালোভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর করি। ৩১ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে নিজেকে ৬ষ্ঠ পজিশনে দেখি। এবার মনে কিছুটা আত্মবিশ্বাস জাগে। এরপর মূল পরীক্ষা, ডেমো ক্লাসের জন্য নিজেকে প্রতিদিন প্রস্তুত করতে থাকি। স্কুল জীবন থেকে বিতর্ক ও আবৃত্তি করার অভ্যাস থাকায় আমার ভাষাগত দক্ষতা ও প্রমিত উচ্চারণে বেশ ভালো দক্ষতা ছিল। ৪ সেপ্টেম্বরের ডেমো ক্লাসে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সকল প্রশ্নের ওপর ক্লাস নিয়ে ছাত্রদের মুহুর্মুহু করতালিতে সম্ভাষিত হই। বিকেলে রেজাল্ট ওয়েবসাইটে রেজাল্ট প্রকাশিত হলে নিজেকে প্রথম পজিশনে আবিষ্কার করে বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বরের ফাইনাল ভাইবা ফেইস করে চূড়ান্ত ফলাফলে প্রথম হই। তারপর প্রভাষক পদে যোগদান করি। এভাবে আমার স্বপ্নের শিক্ষকতা পেশায় পথচলা শুরু।

‘এখানে আগামী এখন’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে এগিয়ে চলা দেশের অন্যতম উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অংশ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। শিক্ষক হিসেবে যাত্রা কেবল শুরু। ভবিষ্যতে শিক্ষক হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় দেখতে চাই।