কেরোসিনের অভাবে কুপি নিভে গেলেও, নেভেনি অদম্য শায়েস্তা

‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল’ থেকে শিক্ষাবৃ্ত্তিপ্রাপ্ত শায়েস্তা।

অভাবের কারণে ছোটবেলা থেকেই উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন নানা বাড়িতে থেকে এসএসসি পর্যন্ত শায়েস্তা পড়াশোনা করেছেন অদম্য শায়েস্তা। তাদের বাড়ি ছিল উপজেলার দৌলতদিয়ার ঢল্লাপাড়া গ্রামে। ঘরে ছিল না বিদ্যুতের আলো। কুপি বাতির টিমটিমে আলোতে করেছেন লেখাপড়া। কেরোসিনের অভাবে মাঝেমধ্যে তাও নিভে যেত। কিন্তু নিভে যাননি শায়েস্তা। অদম্য মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন। এভাবে ২০২০ সালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

শায়েস্তার বাবা আবু বক্কারের প্রায় ১৬ বিঘার মতো জমি ছিল। ২০১৯ সালে নদী ভাঙনে গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে আবু বক্কারের বসতভিটাসহ বাড়ি-ঘর সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। জায়গা না থাকায় একই ইউনিয়নের জলিল সরদার পাড়ায় বছরে ৪ হাজার টাকায় প্রায় ৬ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন। থাকার ব্যবস্থা হলেও পরিবারের ভরণপোষণ কীভাবে করবেন সেই চিন্তায় পড়েন আবু বক্কার। সব হারিয়ে দিনমজুরি কাজ শুরু করেন।

‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল’ থেকে শিক্ষাবৃ্ত্তিপ্রাপ্ত শায়েস্তা।

এদিকে একমাত্র ছেলে কুপি বাতিতে পড়াশোনা করে, টিউশনি করে ভালো ফল করেছে। এখন কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা। দুশ্চিন্তা যেন আরও বেড়ে যায় আবু বক্কারের। এ সময় প্রথম আলোর গোয়ালন্দ প্রতিনিধি শায়েস্তাকে নিয়ে প্রতিবেদন পাঠান। পরে তার ভালো ফল ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল’ থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে অনেকটা নির্ভার হন শায়েস্তা। কারণ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার খরচ বেশি। বাবারও খরচ দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এমন সময় শিক্ষাবৃত্তি মনোবল শক্ত করার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। সেই মনোবলের কারণেই হয়তো এইচএসসিতেও সাফল্য ধরে রাখলেন শায়েস্তা। ২০২২ সালে সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজ থেকে পেলেন জিপিএ-৫। অব্যাহত সাফল্যে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষাবৃত্তির জন্যও তাঁকে নির্বাচন করে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল।

প্রথম আলোর কার্যালয়ে আলাপ হলো শায়েস্তার সঙ্গে। শায়েস্তার ইচ্ছা, ভালোভাবে পড়াশোনা করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। ২০২২-২৩ সেশনে মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে হয়নি, পরে ঢাকা কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। পুনরায় মেডিকেলে দেবেন।

শায়েস্তা বলেন, ‘সব সময় শুধু একটা কথা ভেবেছি, আমাকে ভালো কিছু করতে হবে, ভালো মানুষ হতে হবে। সেভাবেই এগোচ্ছি। আশা করি ভালো কিছু করতে পারব। আর আমার আজকের এই পর্যন্ত আসার পেছনে যারা ছিলেন, আমার শিক্ষকগণ, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং বিশেষ করে ব্র্যাক ব্র্যাক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন, ভালো কিছু পরিবার তথা সমাজের জন্য কিছু করতে পারি। সেই সঙ্গে আমার মতো যারা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে তাদের পাশেদাঁড়াব।’