সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট গ্রামের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী মো. রবিন খান। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় হারান দৃষ্টিশক্তি। রবিন খানের বাবা সোলায়মান খান পেশায় খেতমজুর। একদিকে অসচ্ছল পরিবার, অন্যদিকে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। তারপরও শিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত হননি রবিন। শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। রবিনের অদম্য ইচ্ছা ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত করা হয়। শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ায় রবিনের চলার পথ মসৃণ হয়। পরে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পান। ভালো ফলের ধারাবাহিকতা বাজায় রেখে এ বছর ২০২৩-২০২৪ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ অর্জন করেন তিনি। ভর্তি হন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগে।
সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা কলেজ, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন। প্রতিবন্ধিতা জয় করে এই অর্জন সম্পর্কে রবিন বললেন, ‘আমার জীবনে দুইটা অংশ। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত চোখে দেখতাম। এরপর আর দেখি না। আমিও সবার সঙ্গে খেলতাম, দৌড়াতাম, এখন সেটা পারি না। তবে এখনো আমি ঢাকা শহরে একা রাস্তা পার হই, একা চলি। এই জীবনেও অনেক হ্যাপি আমি।’
দৃষ্টিশক্তি হারানোর গল্পটাও বললেন। রবিন জানালেন, ‘আমি যখন চোখে দেখতাম, তখন সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করতাম। ২০১৪ সালের একদিন আমি সাইকেল নিয়ে পাশের গ্রামে ঘুরতে যাই। ব্রিজ থেকে নামতে গিয়ে সামনের চাকা স্লিপ করে পরে যাই। ডান চোখে জোড়ে আঘাত লাগে তখন। এতে করে ভেতরে রক্তপাত হয় এবং ছিঁড়ে যায়। অনেক চিকিৎসা করালেও ডান চোখের দৃষ্টি ফেরেনি। তারপরও এক চোখ দিয়ে কাছে নিয়ে সবই পড়তে পারতাম। ২০১৫ এর মাঝামাঝিতে বুঝতে পারি, বাম চোখেও সমস্যা হচ্ছে। তারপর আস্তে আস্তে বাম চোখের দৃষ্টিও চলে যায়।’
এত কিছুর পরও থেমে যাননি রবিন। কঠোর মনোবল নিয়ে একের পর এক জয় অর্জন করে চলেছেন তিনি। এমন মনোবল যার, তাঁর জন্য শুভকামনা। একই সঙ্গে তাঁর এই ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য তাঁকে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ের শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীতে করেছে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। এই বৃত্তি তাঁর স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনার পথকে সুগম করবে বলে আশা করি। চোখে আলো না থাকলেও মনের আলোয় বিশ্ব জয় করবেন রবিন—এটা আমার বিশ্বাস।