সাক্ষাৎকার

পরিশ্রমী ও ভালো মানুষ হলে কোনো বাধাই সামনে দাঁড়াতে পারে না—রিফাত শেখ

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে’। এই আয়োজনে আমরা সেই অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে কথা বলি যিনি তার আর্থিক, সামাজিক ও পারিবারিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন সফল হয়েছেন, নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনি একজন অদম্য মেধাবীকে নিয়ে গত ১০ জুলাই ২০২৫, বিকেল ৫টায় আয়োজন করা হয় ‘অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের এ পর্বের অতিথি ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের ছেলে অদম্য মেধাবী রিফাত শেখ। ছোটবেলা থেকেই দরিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করছেন। আর্থিক সংকটের কারণে কলেজে পড়া নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও জ্ঞান অর্জনের অদম্য ইচ্ছার কারণে রিফাত শেখ হয়েছেন সফল। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এখন  সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। সাক্ষাৎকারটি অনুলিখন করেছেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. নাজিম উদ্দিন।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

কেমন আছেন আপনি?

রিফাত শেখ: ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

ভালো আছি। প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা, আপনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেন। আপনার ছোটবেলা সম্পর্কে জানতে চাই। কেমন ছিল ছোটবেলা। ছোটবেলা থেকেই কি রসায়নের পড়ার স্বপ্ন ছিল?

রিফাত শেখ: ছোটবেলায় গ্রামে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল, জীবনে বড় কিছু হতে হবে। ভালো করে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। এতটুকুই স্বপ্ন ছিল। কারণ আমি তো তেমন সুযোগ পাইনি। আর রসায়নের প্রতি ভালোলাগাটা তৈরি হয় এইচএসসিতে এসে। আমার রসায়নের শিক্ষকের ক্লাস করে রসায়নের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। তখন মনে হতো আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে পড়তে পারতাম!

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

রসায়নে ভর্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নি—এটা কেমন ছিল?

রিফাত শেখ: এই জার্নিটা এতটা সহজ ছিল না। অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে। আমি যখন প্রাইমারিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলাম, তখন ভেবেছিলাম যে আমাকে একটা সাইকেল কিনে দেবে। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য ছিল না। তখন মনে হয়েছে আমাকে আরও স্ট্রাগল করতে হবে। যদিও পরে আমাকে একটা পুরোনো সাইকেল কিনে দেওয়া হয়েছিল। আমি জামা বানাতাম বড় করে যাতে অনেক দিন পড়তে পারি। এমনও সময় গেছে, ক্ষণে ক্ষণে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় থাকতাম। এক জামা দিয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। অনেক সময় পুরোনো জামা কিনে পড়েছি। এভাবে দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার মধ্যেও এসএসসি ভালো ফল করি। তখন গোয়ালন্দ প্রতিনিধি আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করেন। পরে আমার ভালো ফল ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনায় আমাকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তি আমাকে নতুন করে সাহস জোগায়। এই সহায়তায় এইচএসসিতে ভালো ফল করি, জিপিএ-৫ পাই। আবারও পাশে দাঁড়ায় প্রথম আলো ট্রাস্ট। এরপর স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। রসায়নের প্রতি দুর্বলতার কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

রসায়নে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেন। স্বপ্নটা কি এখন?

রিফাত শেখ: এখন স্বপ্নটা হলো একটা সুন্দর ক্যারিয়ার করা। প্রথমত সরকারি একটা চাকরির চেষ্টা থাকবে। দ্বিতীয়ত রসায়নে শিক্ষকতা করার। তৃতীয়ত, রসায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু ফিল্ড আছে, সেগুলোতে চেষ্টা করা। তবে ইচ্ছা আছে, চাকরির পাশাপাশি রসায়নে পিএইচডি করার। সময় ও পরিস্থিতির অনুযায়ী এগোব।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

বাবা-মা কি বলেন এখন। তাদের স্বপ্ন কি?

রিফাত শেখ: তাঁরা সব সময় বলেন, তুমি সুস্থ থাকো, ভালো কিছু করার চেষ্টা কর। তাঁরা সরকারি চাকরি ও শিক্ষকতার কথা বলেন। আমি তাঁদের সঙ্গে আমার পরিকল্পনা শেয়ার করি। তাঁরাও আমাকে সাপোর্ট করেন। সমাজের জন্য কিছু করি, এটা তাঁরা চান।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

জীবনে খারাপ সময়গুলো মোকাবিলা করা বা উতরানোর সূত্রটা যদি বলেন।

রিফাত শেখ: আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার থেকে যদি বলি, মানুষকে ভালোবেসে, ভালো চিন্তা করে এবং পরিশ্রম করে সব বাধা উতরানো যায়। ভালো মানুষ ও পরিশ্রমী হলে কোনো বাধাই সামনে দাঁড়াতে পারবে না। আমার অনেকবার মনে হয়েছে—আমি হয়তো আর পারব না। এই সময়টাতে প্রথম আলো আমার পাশে দাঁড়ায়। আমার আবার সাহস পাই। আমি শুধু পরিশ্রম করে গেছি, সফলও হয়েছি। ভালো মানুষ হওয়া ও পরিশ্রম, এই সূত্র বিশ্বাস করে সফলতা আসবেই।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

রিফাত শেখ: আপনাকেও ধন্যবাদ। প্রথম আলো যেমন হাজারো রিফাতের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমিও যেন অন্যের মনে আলো জ্বালাতে পারি। আমিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেন আমার মতো রিফাতদের পাশে দাঁড়াতে পারি। আমরা সংগ্রামী জীবনে সহজ করে দেওয়ার জন্য আপনাদের কাছে আমার অসীম কৃতজ্ঞতা।