অদম্য লিপি এখন সরকারি চাকুরে

ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া লিপি খাতুন।

ঢাকায় পড়তে আসতে দিতে বাবা রাজি নন। আর্থিক অবস্থা ভালো না। অথচ তাঁর চোখভরা স্বপ্ন। পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। তাই বেশি কিছু না ভেবেই ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েটি রাজধানীর বাস ধরেন। জেদি, শান্ত মেয়েটার হাতে তখন শুধু ‘ভিসি ম্যামের’ (সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান) ভিজিটিং কার্ড ও শিক্ষাবৃত্তির টাকা। সঙ্গে আরও ছিল মনের জোর, সাহস আর পরীক্ষার ভালো ফল। পরিবার আর দারিদ্র্যের বাধা না মানা এই মেয়েটির নাম লিপি খাতুন। কুপির তেল খরচ করে পড়ালেখা করাটা যাঁর জন্য বিলাসিতা ছিল, সেই মেয়েটি ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির (সিডব্লিউইউ) বিবিএ বিভাগ থেকে পাস করে গেল বছর সমাজসেবা অধিদপ্তরে ইউনিয়ন সমাজকর্মী হিসেবে যোগদান করেছেন।

লিপি বলেন, ‘মা-বাবা ও পাঁচ ভাইবোনের সংসার। আম্মা গৃহিণী। বাবা ছিলেন তাঁতশ্রমিক। যে টাকা আয় করতেন তাতে তিনবেলা খাবারই জুটত না। তবে আম্মা সবাইকে পড়াশোনা করাতে চেয়েছেন। এ জন্য তাঁকে কম কষ্ট করতে হয়নি। কাঁথা সেলাই করে, বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করে টাকা আয় করেছেন, আমাদের স্কুলে পাঠিয়েছেন।’

একটু থেমে লিপি আবার বলতে শুরু করেন, ‘বাড়িতে হারিকেন ছিল না। রাতে পড়লে কুপির তেল খরচ হবে। তাই ভোরে মোরগ ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতাম। পড়াশোনাটা সব সময় দিনের বেলায় শেষ করার চেষ্টা করতাম।’

সবাইকে অবাক করে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান তিনি। খুশি না হয়ে বরং মা-বাবার মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ কীভাবে কলেজে ভর্তি হবেন সেই দুশ্চিন্তা ছিল। এ সময় লিপি এক ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন, ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তির খবর। যোগাযোগ করেন প্রথম আলোর সঙ্গে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১০ সাল থেকেই স্নাতক পর্যন্ত এ শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন তিনি।