রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল গ্রামের অদম্য মেধাবী মো. ফারুক হোসেন। তিনি ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি পূবালী ব্যাংক পিএলসিতে কর্মকর্তা পদে কর্মরত। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবেশনারি অফিসার (জেনারেল) পদে ব্যাংকটি প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি রংপুরের স্টেশন রোড শাখায় কর্মরত। ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ এ প্রবেশনারি পিরিয়ড শেষ হবে বলে জানান ফারুক।
কিন্তু ফারুক হোসেনের আজকের যে অবস্থান, তার জন্য তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যে কষ্টের গল্প আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে— এটা অন্তত বলতে পারি। ফারুকের বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। অভাবের সংসার, তার ওপর পাঁচ ভাইবোন ফারুকেরা। ফলে ফারুক জানত, তাঁকে লড়াই করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই মনোবল শক্ত করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সেটাও সইল কই! চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে তাঁর মা এবং নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে বাবা মারা যান। বাবা-মা দুজনই মারা যাওয়ার পরে ওই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মুন্নার কাছে আশ্রয় পান ফারুক। আশ্রিত থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
মানুষের ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় শক্তি কিছু নাই। চেষ্টা করলে কঠিন পথ পার করা যায়। নিজের ইচ্ছা থাকলে অনেক বাঁধা অতিক্রম করা যায়— অদম্য ফারুক হোসেন।
প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এমন ভালো ফল করায় তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে তাঁর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তির সহযোগিতায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করে ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পান তিনি। পরে তাঁকে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনার জন্যও বৃত্তির আওতায় নেওয়া হয়। ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। এখান থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ করে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর (শপ) পদে যোগ দেন। এখানে আড়াই বছর চাকরি করে ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দেন।
ব্যাংকে চাকরি পেয়ে ফারুক জানান, ‘ব্যাংকের কাজের ধরন আলাদা। এখন এই কাজগুলো শিখছি। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখছি। এদিকে আমার পালক বাবা ক্যানসার আক্রান্ত। ওনার চিকিৎসা চলছে। আমি আমার বাবার চিকিৎসায় সাহায্য করছি। এটা আমার একটা ভালো লাগার জায়গা। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’
ফারুক ছোটবেলার গল্প বলতে গিয়ে বলেন, 'পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমার বাবার কেরোসিন কেনার আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। সেই সময়ে আমি মসজিদের গিয়ে মসজিদের লাইটের আলোয় পড়াশোনা করেছি। আমাকে কেউ বলেনি এমনটা করতে। আমি নিজের ইচ্ছায় এই কাজটা করেছিলাম ভালো ফলাফলের জন্য। সামনের দিনে ভালো থাকার পথ তৈরি করার জন্য। মানুষের ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় শক্তি কিছু নাই। চেষ্টা করলে কঠিন পথ পার করা যায়। নিজের ইচ্ছা থাকলে অনেক বাঁধা অতিক্রম করা যায়। সৎ থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস নিয়ে পথ চললে সব বাঁধা অতিক্রম করে সফল হওয়া সম্ভব।'