ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় আড়াইসিধা গ্রামের ছেলে মো. কামরুল হাসান। তাঁর বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। মাঝেমধ্যে কামরুলকেও বাবার সঙ্গে কাজে নামতে হতো। কারণ চার ভাই এক বোন নিয়ে ৭ সদস্য বড় পরিবার বাবার একার আয়ে চালাতে কষ্টসাধ্য ছিল। তাই পড়াশোনা, কাজ আবার পড়াশোনা—এভাবেই চলেছে অনেকটা পথ তাঁর। তবে সব বাধা অতিক্রম করে ২০১২ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন কামরুল। পরে প্রথম আলোর প্রতিনিধি তাঁকে নিয়ে নিউজ পাঠান, প্রথম আলোয় ছাপা হয়। শুধু নিউজ ছাপিয়ে দায়িত্ব শেষ না করে প্রথম আলো ট্রাস্ট তাঁর বৃত্তির ব্যবস্থাও করে।
পড়াশোনার প্রতি তাঁর অদম্য ইচ্ছা ও মেধা শক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। এই শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ফ্যাকাল্টি থেকে ফিন্যান্স বিভাগে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছেন কামরুল। ২০২৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে হিসাবরক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত।
কামরুল হাসান বলেন,‘বড় পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। বাবার একার আয়ে সংসার চলত না। তাই বাবার সঙ্গে কাজ করতাম। এভাবে কাজ, পড়াশোনা করে ভালো ফল করি। বৃত্তি পাই। বৃত্তি পেয়ে ২০১৪ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পাই। ২০১৪-১৫ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। পরে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে ২০১৫-১৬ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। স্নাতকেও আমাকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এই বৃত্তিই আমার একমাত্র ভরসা ছিল।’
পরক্ষণে কামরুল যোগ করে বলেন, ‘আসলে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি না পেলে আমার পড়াশোনা সম্ভব হতো না। এই বৃত্তি ভরসার জায়গা থেকেই পড়াশোনা চালাতে পেরেছি। তা ছাড়া আমার মনে হয়েছে, জীবনে এগিয়ে যেতে চাইলে পরিশ্রম করতে হবে। আমিও তাই করেছি, এগিয়েও যাচ্ছি।’