সাক্ষাৎকার

‘দিন শেষে মানবিক মানুষ হওয়া চাই’

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন হলো ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন আয়োজন। এ আয়োজনে প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া একজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ উপলক্ষে ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শিমুলঘর গ্রামের অদম্য মেধাবী ইমরান লস্করকে। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া ইমরান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করে বর্তমানে স্নাতকোত্তর পড়ছেন।

আট সদস্যের পরিবারে ইমরানের বাবা দিনমজুরি করে সাংসার চালান। বাবা ছুট্টো মিয়া লস্করই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, মা রাহেলা খাতুন গৃহিণী। ভিটেমাটি ছাড়া জমিজমা নেই। আয়ের আর কোনো উৎস নেই। এই অবস্থা থেকে ইমরানের ওঠে আসা এবং তাঁর স্বপ্নের কথাগুলো ওঠে এসেছে এ অনুষ্ঠানে। আয়োজনটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। সার্বিক ব্যবস্থাপান ও অনুলিখন করেছেন নাজিম উদ্দিন। প্রশ্ন উত্তরের আলোকে পরামর্শ সভার চুম্বক অংশ নিম্নরূপ:

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

পরিসংখ্যানে পড়াশোনা করে লেখক হতে চান কেন?

ইমরান লস্কর: আমার স্বপ্নের যাত্রায় সহযোগিতা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ প্রথম আলোকে। আমি বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছি, তবে মানুষকে জানার জন্য সাহিত্য পড়া ও জানা দরকার মনে করি। তা ছাড়া বই আমাকে সব সময় টানে। সাহিত্যে যে মজাটা পাই, বিজ্ঞানে পাই না। হতে পারে এটা আমার ব্যর্থতা। মানুষকে জানতে ও মানুষের কাছে যেতে লিখতে চাই। সে পথেই আছি, লিখছি। এবার বই মেলায় একটা বইও বের হচ্ছে আমার।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আগ্রহটা জন্মাল কীভাবে?

ইমরান লস্কর: আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন সেলুনে গিয়ে প্রথম আলো পত্রিকা পড়তাম। সম্পাদকীয় পড়তাম। সেকায়েপ বই দেয়—ওখান থেকে বই নিতাম, পড়তাম। বন্ধুদের বই নিয়ে পড়তাম। বইয়ের পাতায় যে গল্প আছে, প্রেম আছে সেটা বই না পড়লে পাওয়া যায় না।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

এখন রাজশাহীতে বই মেলা চলছে, আপনার সম্পৃক্ততা আছে। কীভাবে আয়োজন করলেন?

ইমরান লস্কর: বইয়ের সমাহারে আনন্দ আছে। মানুষের কাছে বই পৌঁছে দেওয়ার আগ্রহ থেকে এই বই মেলার আয়োজন করা। বাংলাদেশ তরুণ লেখক ফোরামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসাবে আমার মনে হয়েছে, একটা বই মেলা করা যায়।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনার চেষ্টাকে বাবা-মা কীভাবে দেখেন।

ইমরান লস্কর: এবার বই মেলায় আমার একটা কবিতার বই বের হচ্ছে—এটা শুনে বাবা ও মা খুবই খুশি হয়েছেন। আমি যেহেতু গরিব পরিবার থেকে ওঠে আসা। তাই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াই, এটা তারা চান। পাশাপাশি ভালো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরি—এটাও চান। আমি সেভাবেই প্রস্তুত করছি। চাকরির পাশাপাশি লেখালেখি করব।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

ইমরান লস্কর: আমি পরিসংখ্যানের ছাত্র। এখন স্নাতকোত্তর করছি। চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্বপ্ন ছোট করে দেখতে নেই। প্রথম আলো সেটা শেখায়নি। আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। যত পরিশ্রমই হোক—সে জায়গায় যেতে চাই।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

কখনো কি হতাশ হয়েছেন, ভেঙে পড়েছেন?

ইমরান লস্কর: ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রথমে মেডিকেল ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ হয়নি। তখন মনে হয়েছে—আমি কি পারব? তবে ভেঙে পড়িনি। মনোবল শক্ত করে ভালোভাবে পড়াশোনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাই। পরিসংখ্যানে ভর্তি হই।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

অনুজাদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে আপনার?

ইমরান লস্কর: আমরা আসলে মানবিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছি। নীতিতে অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই অনুজদের আমি অনুরোধ করব—মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে হবে। মানবিক মানুষ হতে হবে। আরেকটা বিষয়, সাধারণত এইচএসসির পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি হই। পরিবার ছেড়ে বাইরে যেতে হয়, বাইরে থাকতে হয়। ওই সময়টাতে কয়েকটা বিষয় গুরুত্বসহকারে নিতে হবে তা হলো (১) . বন্ধু নির্বাচন (২) . একাডেমিক পড়াশোনা করা (৩) . এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি করতে হতে (৪) . চার বছর পড়া শেষ করে অন্তত বলতে পারতে হবে—আমি ২০০ বই পড়েছি। পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই।

আরেকটা বিষয় হলো ইন্টারনেট আসক্তি। এটা থেকে বের হতে হবে। নির্দিষ্ট সময় আপনার স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে হবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। টার্গেট সেট করে এগোতে হবে।