ছোটবেলার মিলন আর আজকের মিলন—পুরো গল্পটা শুনতে চাই।
মো. মিলন হোসেন: প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টকে অদম্য মেধাবীদের এক সঙ্গে একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রথম আলো সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান, নাটোর প্রতিনিধি মোক্তার হোসেন ও আমার স্কুলশিক্ষক জনাব আব্দুল হাকিম স্যারের প্রতি। স্যারের মাধ্যমেই প্রথম আলোর এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হই।
আমার ছেলেবেলা বলতে, আমার বয়স যখন ৪-৫ বছর তখন বাবা মারা যান। তখন আমরা দুই ভাইসহ নানা বাড়িতে উঠি। চিন্তা-ভাবনা হয় আমরা পড়ব না, আমাদের কাজ করতে হবে। কিন্তু মা পাশে দাঁড়ান। মা বলেন, আমি শ্বশুর বাড়ি হারিয়েছি কিন্তু যেভাবেই হোক আমার সন্তানদের আমি পড়াশোনা করাব। পরে আমি নাটোর শিশু একাডেমিতে ভর্তি হই। পরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যাই। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। জেলায় দশম হই। পরে গভ: বয়েজ স্কুলে ভর্তি হই। কিন্তু নবম শ্রেণিতে যখন উঠি তখন বিজ্ঞান বিভাগে পড়ব কিভাবে সেই দু: চিন্তা পেয়ে বসে। তখন নিজাম স্যার, হাকিম স্যার বললেন, তুমি বিজ্ঞান বিভাগে যাও, আমরা ফ্রি পড়াব। আমাকে চারজন শিক্ষক টানা চার বছর ফ্রি পড়িয়েছেন। এসএসসির ফরম পূরণের পুরো টাকাটা আব্দুল হাকিম স্যার দেন। স্যার আমার মাকে বলে ওনার বাড়িতে নিয়ে নেন। সারাক্ষণ দেখিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আমি সকল বিষয়ে এ+ পেয়ে জিপিএ-৫ পাই।
এরপর কীভাবে আজকের জায়গায় আসলেন?
মো. মিলন হোসেন: এসএসসিতে ভালো ফল করলেও কলেজে ভর্তি হতে পারব কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল, মনে দু”চিন্তা ভর করেছিল। তখন হাকিম স্যার আমাকে প্রথম আলোর নাটোর প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি আমাদের বাড়িতে এসে, সব জেনে রিপোর্ট করেন। পরে আমাকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। পরে এইচএসসিতেও ভালো ফল করলে আমাকে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। শিক্ষাবৃত্তির সহায়তায় আমি নতুন করে সাহস পাই, ভালো করে পড়াশোনা করার অনুপ্রেরণা পাই। তাই স্নাতকে জিপিএ ৩.৭৫ পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করি এবং শিক্ষকতা পেশায় যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় তা হয়ে ওঠেনি। পরে বিসিএসের দিকে যাই। এখন ৪৪ তম বিসিএস ভাইভা প্রার্থী; ৪৫ তম বিসিএস লিখিত ফল প্রত্যাশী এবং ৪৬ তম বিসিএস লিখিত প্রার্থী। একজন প্রথম শ্রেণি কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করাই আমার লক্ষ্য এখন। আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে পাশে ছিল প্রথম আলো ট্রাস্ট। এ জন্য বলি, প্রথম আলো ভালোর সঙ্গে, আলোর পথে।
আমাদের অদম্য মেধাবীদের যারা এখন চাকরি প্রত্যাশী তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
মো. মিলন হোসেন: তাদের প্রতি একটা পরামর্শ হলো, তারা যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে হাল না ছাড়ে। মাথায় চিন্তা রাখতে হবে যে, আমি একটা লং জার্নির মধ্যে আছি। এটা অতিক্রম করতেই হবে। ধৈর্য ধারণ করতে হবে, মনোবল শক্ত রাখতে হবে। ভালো ফল পেতে হলে ধৈর্য ধরে অধ্যবসায় চালিয়ে যেতে হবে।
এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেলেন কোথায়?
মো. মিলন হোসেন: আমি আমার মায়ের সাহসে এগিয়ে যাচ্ছি। মা বলেন, আমি কাজ করে যেটুকু পারছি তোমাকে দিয়ে যাব। তোমাকে এগিয়ে যেতেই হবে। তা ছাড়া প্রথম আলো ট্রাস্ট আমাকে ৬ বছর ধরে বৃত্তি দিয়েছে—এটা আমার আরেকটা শক্তি। আমি প্রথম আলোর সহযোগিতা যাতে বিফলে না যায়, সেই প্রত্যয় নিয়ে এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাচ্ছি। ধন্যবাদ আপনাদের, প্রথম আলো ও ব্র্যাক ব্যাংককে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমাদের মতো সকল অদম্য মেধাবীরা যাতে স্বপ্নপূরণ করতে পারে, মানুষের পাশে থাকতে পারে সেই প্রত্যাশা করি সব সময়।