ময়মনসিংহের সাদিয়াতুল জান্নাত। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন ভালো। ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। বাবা সাদিকুর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েন সাদিয়াতুল। সাদিকুর রহমান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের স্বল্প বেতনের চাকুরে ছিলেন। তাঁর স্বল্প আয়েই পাঁচ সদস্যের পরিবারটি চলতো। পরিবারের বিপদের সময় মা মনোয়ারা আক্তার শক্ত হাতে পরিবারের হাল ধরেন। তাঁর শখের সেলাই মেশিনটি হয়ে দাঁড়ায় পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। উদয়ান্ত সেলাই মেশিনে কাজ করেন মনোয়ারা বেগম। কিন্তু মাস শেষে পরিবারে আয় দাঁড়ায় সাকল্যে দশ হাজার টাকা।
এই সামান্য টাকায় তিন ছেলেমেয়ের পড়ালেখা ও খাওয়ার খরচ কীভাবে মিটবে? এরই মধ্যে সাদিয়াতুল জান্নাতের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন সাদিয়াতুল। একদিকে মেয়ের ভালো ফল, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি আর একদিকে পরিবারের আর্থিক অনটন অকূলপাথারে পড়েন মা মনোয়ারা। প্রথম আলো ট্রাস্ট সাদিয়াতুল জান্নাতের পাশে দাঁড়ায়। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত হন সাদিয়াতুল। এই সহযোগিতার ফলে দ্বিগুণ উৎসাহে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে সাদিয়াতুল জান্নাত। ফলও পান হাতেনাতে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও পান জিপিএ-৫। এরপর ভর্তি যুদ্ধে মেধার স্বাক্ষর রেখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।
কথা হয় সাদিয়াতুল জান্নাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে বাবার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য পরিশ্রম করছি। ভবিষ্যতে স্বপ্ন দেখি নাসাতে পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করব। আমাদের বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থী বর্তমানে নাসাতে কাজ করছে। তারা পারলে আমিও পারব। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়াশোনা করছি।’
উল্লেখ্য, সাদিয়াতুল জান্নাতের স্বপ্নপূরণের পথে আবারওপাশে দাঁড়িয়েছে ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট’। তিনি স্নাতক পর্যায়েও এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন।