স্বপ্নপূরণের আনন্দে মায়ের সঙ্গে গল্পে গল্পে কেটেছে ফলাফল ঘোষণার দিন সারা রাত। দুঃখ-কষ্ট পাড়ি দেওয়ার কতই না গল্প। দুজনই ভুলে গিয়েছিলেন রাতের খাবারের কথা। ফজরের আজান শুনে টের পান, রাত ফুরিয়ে এল। মনে হয়েছে, জীবন থেকেও রাতের আঁধার দূর হয়েছে। আলোর পথে যাত্রা শুরু এবার।
সানিডেইল স্কুল-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে বৃত্তি পাওয়া শফি কামাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তির সুযোগ পাওয়ার রাতের গল্প এভাবেই ব্যক্ত করেন প্রথম আলোর কাছে।
শফি কামাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র ও পৌর এলাকার আজাইপুর (আবুরাজপাড়া) মহল্লার বাসিন্দা। তিনি বুয়েটে নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
শফি কামালের মা নূর মহল বেগম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ছেলে আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কাগজ কেটে বাড়ি বানাত। উড়োজাহাজ দেখলেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হতো। বলত বড় হয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার হব। ওর ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট ছিল সব ভুলে গেছি। শত অভাব-অনটনেও মানুষের কাছে কিছু চাইতে পারিনি।কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু তার পরেও মনোয়ারা ম্যাডাম অনেক কিছু করছে। তাঁর মাধ্যমেই সানিডেইল স্কুল-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকায় গেছি ছেলেকে নিয়ে। মন ভরে গেছে গরিব মানুষের সব ছেলেমেয়েদের দেখে, তাদের কথা শুনে। মন থেকে থেকে দোয়া করি প্রথম আলো ট্রাস্টের জন্য।
জীবনসংগ্রামের স্মৃতিচারণা করে শফি কামাল বলেন, ‘জীবনে বাবা থেকেও নেই। তাঁর আলাদা সংসার রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে লেখাপড়া বা ভরণপোষণের কোনো সহায়তা পাইনি। মা সামলেছেন সব। আর মায়ের মতো ভূমিকা পালন করেছেন আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) শিক্ষকেরা। বিশেষ করে হেড ম্যাডাম মনোয়ারা খাতুন। তিনি আমার জীবনে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টকেও ধন্যবাদ আমার পাশে থাকার জন্য।