দৃঢ় মনোবল ও মায়ের সমর্থনে এগিয়েছেন আবুল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দশদোনা গ্রামে আবুল হোসেনের বাড়ি। নিজেদের জমি জমা বলতে কিছুই নেই। বাবা মো. হাকিম মিয়া দিনমজুর। মা জাহানারা বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করেন। রোজগার নেই, তাই পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু মায়ের সমর্থন এবং আবুল হোসেনের দৃঢ় মনোবলের কারণে ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। শিক্ষাবৃত্তি পান ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে।

অদম্য মেধাবী আবুল হোসেন সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। তিনি কুমিল্লা মেডিকেল অ্যাসিসটেন্স ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) থেকে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর চক্ষু হাসপাতালে সহকারী মেডিকেল অফিসার পদে চাকরি করছেন। তাঁর এই সফলতার গল্প ওঠে আসে ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২,মঙ্গলবার, বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

সহকারী মেডিকেল অফিসার হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাইলে আবুল হোসেন জানান, ‘আমি আসলে নিম্নবৃত্ত পরিবারের সন্তান। অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে বড় হয়েছি। তবে সব সময় ভালো ছাত্র ছিলাম। যার কারণে আমার শিক্ষকেরা সব সময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমি যখন এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করি তখন আমার এক শিক্ষকের মাধ্যমে প্রথম আলোর শিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে জানতে পারি। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করি। পরে আমাকে ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির’ জন্য নির্বাচন করা হয়। এই শিক্ষাবৃত্তি দিয়েই আমি ৪ বছরের ডিএমএফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি) পড়াশোনা শেষ করি। আপনাদের সহযোগিতা ও মা-বাবার দোয়ায় এখন ভালো আছি।’

ডিপ্লোমা পড়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন? এর উত্তরে তিনি জানান, মানুষের সেবা করার ইচ্ছা ছিল আমার। তা ছাড়া এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে পড়ার সামর্থ্য ছিল না। দ্রুত কিছু করা যায়, এমন কিছু করতে হবে মাথায় ছিল। তাই এই লাইনে আসা। তবে বাবা-মা অনেক সাপোর্ট করেছে। এখন তাঁরা খুব খুশি।

পরক্ষণেই আবার বলেন, ‘এসএসসি পাসের পর সবাই কলেজে ভর্তি হচ্ছে। আমি বাড়িতে ছিলাম। কারণ কলেজে ভর্তির খরচ, বাইরে থাকার খরচ, পড়াশোনার খরচ কই থেকে আসবে। এই ভেবে মনে হয়েছে, আমার হয়তো আর পড়াশোনা হবে না। পরে আমার শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করি। তিনি কয়েকটা টেকনিক্যাল লাইনের কথা বলেন। কয়েকজনের সহযোগিতায় ফরম ওঠাই এবং ভর্তির সুযোগ পাই।’

সামনে স্বপ্নগুলো কি? নিজেকে কোথায় দেখতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই। মেডিকেল লাইনে যেমন পাবলিক হেলথে স্নাতক করতে চাই।’

মায়ের অনুভূতি কেমন জানাতে চাইলে অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন আবুল। তিনি বলেন,‘মা আমার জন্য অনেক করেছেন। ঘরে ও বাইরে কাজ করতেন, এখনও করেন।’

এখন মানুষের সেবা করছেন, কেমন লাগে? এর উত্তরে বলেন, অনেক ভালো লাগে। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময় চক্ষু ক্যাম্প করে থাকে। সেখানে মানুষকে হেল্প করতে চেষ্টা করি।

সবশেষে অদম্যদের উদ্দেশ্যে আবুল হোসেন বলেন, ‘কষ্ট হলেও পড়াশোনাটা চালিয়ে যাও। কষ্ট হয়ই জীবনে। একটু সাহস করতে হবে। লক্ষ্য ঠিক থাকলে সফল হবেই। তখন অনেক ভালো লাগবে।’