‘সিজিপিএ যেমন দরকার, স্কিলটাও গুরুত্বপূর্ণ’

চট্টগ্রামের মেয়ে আফসানা শারমিন রুম্পা ২০১৩ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে স্নাতক শেষ করেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে। এখন কাজ করছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিলে। এখানে তিনি প্রোটেকশন টিম লিডার (লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা) হিসেবে কাজ করছেন। ইচ্ছা আছে আরও উচ্চতর পড়াশোনা করে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ওপর বিস্তার কাজ করার। তাঁর পড়াশোনা ও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে করণীয় যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে। ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ (শনিবার), বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে। প্রথম আলো ট্রাস্ট এই অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আফসানা তাঁর গল্প শুরু করেন পড়াশোনা ও চাকরি জীবন দিয়ে। তিনি বলেন, ‘এইউডব্লিউতে অনেক ডাইভার্সিটি ও ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। এখানে পড়াশোনার ক্ষেত্রে একক কোনো বিষয় নেই। সবাইকে সব বিষয়ে পড়তে হয়। তাই আমার মেজর বিষয় কম্পিউটার সায়েন্সে হলেও জেন্ডার বিষয়ক নানা বিষয়ে কোর্স করতে হয়েছে। আমার আগে থেকেই ইচ্ছা মানুষ ‍নিয়ে কাজ করার। সে জন্য জেন্ডার ইস্যুকে কাজের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আর এই আগ্রহ থেকেই ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিলে আবেদন করি। তারা আমার পটেনশিয়ালিটি দেখতে পেয়েছেন বলে চাকরি পেয়ে যাই।’

আফসানা তাঁর বাবা-মায়ের প্রথম কন্যা সন্তান যিনি স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছেন। তিনি জানান,‘এখানে আমি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, সামাজিক স্টেরিওটাইপ্‌স নিয়ে কাজ করছি। আমি এখানে টিম লিডার হিসাবে কাজ করছি। এর পেছনে প্রথম আলো ও এইউডব্লিউ চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। আমাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

এইউডব্লিউ আপনাকে কীভাবে তৈরি করল জানাতে চাইলে জানান, ‘এখানে আসার আগে আমি বাংলা মাধ্যম পড়াশোনা করেছি। আসলে আমরা যারা বাংলা মিডিয়াম থেকে আসা তাদের একটু সমস্যা হয় প্রথম দিকে। কারণ বেশির ভাগ বিদেশি শিক্ষক, তাঁদের এ্যাকসেন্ট ধরতে একটু সমস্যা হয়। তবে এইউডব্লিউতে একটা বিষয় হলো-প্রথম বছর আমাদের ফাউন্ডেশন কোর্স করতে হয়েছে। যার মাধ্যমে টিচারদের সঙ্গে ক্লোজ ইন্টারেক্ট করেছি, আমাদের বিভিন্ন গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করেছি। এগুলোর মাধ্যমে ট্রেইনড করা হয়েছে, লিডারশিপ স্কিল তৈরি করেছে। তা ছাড়া ভিনদেশিদের সঙ্গে সব সময় কমিউনিকেশন করা, থাকা, খাওয়া, গ্রুপ ওয়ার্ক করার কারণে অনেক স্কিল ডেভেলপ করেছে। এটা চাকরি ক্ষেত্রে অনেক কাজে দিয়েছে।আমি দেখেছি যে, যারা এইউডব্লিউ থেকে আসে তাদের একটু আলাদাভাবে ট্রিট করে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায়।’

বর্তমানে যারা পড়ছে এবং নতুন অদ্বিতীয়াদের জন্য পরামর্শ কি হবে জানতে চাইলে আফসানা বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমি বলব, করোনার আগে সব একসাথে হত। এখন অনলাইনে হচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো হলে সবাই একসাথে গ্রুপ ওয়ার্ক করতে হবে। নিজের শতভাগ দিতে হবে। কোনোভাবে ভেঙে পড়া যাবে না। সিজিপিএ যেমন দরকার, স্কিলটাও গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ’

কী স্বপ্ন দেখে আফসানা? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘যেহেতু জেন্ডার ইস্যু নিকে কাজ করছি, সেহেতু এই বিষয়ের ওপর আরও পড়াশোনা ও স্কিল অর্জন করতে চাই। সে জন্য দেশের বাইরে গিয়ে জেন্ডার বা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে এই সেক্টরে কাজ করব।’

বাবা-মা আফসানা নিয়ে কি স্বপ্ন দেখে জানতে চাইলে জানান, ‘আমার বাবা-মা শুরু থেকেই অনেক সাপোর্টিভ ছিল। আমি এখন যে আবস্থানে আছি, তা নিয়ে সব সময় গর্ববোধ করেন। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সময় আমাকে উদাহরণ হিসেবে টানেন। তখন খুব ভালো লাগে আমার।’

উল্লেখ্য, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ অসচ্ছল, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন।

২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নতুনভাবে নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’ নামে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৩৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন (আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত)। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।