ভবিষ্যতে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অবদান রাখতে চান ‘অদ্বিতীয়া’ মাহিম

প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে মাহিম রোকেয়া।

মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মাহিম রোকেয়া। বাবা কৃষি কাজ করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ট্রোক করে মারা যান। সাত বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহিম প্রথম স্নাতক সম্পন্নকারী নারী। বর্তমানে কর্মরত আছেন ব্র্যাকের ওয়াশ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে। কাজ করছেন ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তাঁর এই সাফল্যের কথা ওঠে আসে ২৫ এপ্রিল ২০২২,সোমবার, বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে। মাহিম ২০১৫ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পাবলিক হেলথে স্নাতক শেষ করেছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে। একই সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে ইন্টার্নশিপ করেছেন।

মাহিমের অদ্বিতীয়া হওয়ার গল্প জানতে চাইলে বলেন, ‘ জীবন গল্প অনেক বড়। গ্রামে বড় হয়েছি, অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বাংলা বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করছি। যখন এইউডব্লিউতে আসি তখন ১৭দেশের মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগটা ছিল কঠিন। আমি এর আগে কখনো বাড়ির বাইরে থাকিনি। সুতরাং নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এইউডব্লিউ অনেক সহযোগিতা করে।’

তাই কোথায় ভর্তি হব তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। প্রথম আলোতে বৃত্তির বিজ্ঞাপন দেখি তখন আমি ও পরিবারের সবাই এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, চোখ বন্ধ করে এখানে যাওয়া যায়। পরে আবেদন করি। সুযোগও হয়ে যায়। মোট কথা আমার টাফ ডিসিশনটা সহজ করে দেয় প্রথম আলো।

এইউডব্লিউ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সঙ্গে পথচলাটা কেমন ছিল জানতে চাইলে জানান,‘বাড়ির বাইরে যেহেতু সেভাবে যাওয়া হয়নি। তাই কোথায় ভর্তি হব তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। প্রথম আলোতে বৃত্তির বিজ্ঞাপন দেখি তখন আমি ও পরিবারের সবাই এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, চোখ বন্ধ করে এখানে যাওয়া যায়। পরে আবেদন করি। সুযোগও হয়ে যায়। মোট কথা আমার টাফ ডিসিশনটা সহজ করে দেয় প্রথম আলো। আমার জীবনের শুরুই হয়েছে এইউডব্লিউ ও প্রথম আলোর মধ্যদিয়ে। এ জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট ও এইউডব্লিউ’র প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

দেশের সীমানা পেরিয়ে জাপানে ইন্টার্নশিপ করেছেন মাহিম। অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো জানতে চাইলে জানান, ছোট থেকেই পরিবারের মধ্যেই ছিলাম। কিন্তু একটা সময় মনে হলো যে, আমি যদি বের না হই তা হলো নিজেকে এক্সপ্লোর করতে পারব না। তাই এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে ইন্টার্নশিপ করি। নিজেকে অনেকভাবে জেনেছি। সেটা এক অনন্য অভিজ্ঞতা ছিল আমার জন্য। প্রথম আলোর অদ্বিতীয়ার এ্যাডটা একটা বিশ্বাসের জায়গা, যার জন্য সবকিছু সহজ হয়েছে।

পাবলিক হেলথে পড়ার সময় মনে হয়েছে আমি পেশাগত স্বাস্থ্য (অকুপেশনাল হেলথ) বিজ্ঞানে কাজ করার জায়গা আছে। তাই পেশাগত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই।

মাহিম জানালে, তৃতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে দক্ষিণ কোরিয়াতে যাই। তখন আমরা ৪জন ছিলাম। পরে জাপানে ইন্টার্নশিপ করতে যাই। তখন আমি একা ছিলাম। নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মানিয়ে নিতে পেরেছি। এখন যেমন দূর্গমচর ভাসানচরে কাজ করছি। অনেকগুলো সংস্থায় কাজ করে সম্প্রতি ব্র্যাকে জয়েন করেছি। এইউডব্লিউ এই কনফিডেন্সটা তৈরি করে দিয়েছে।’

এখন কি স্বপ্ন দেখেন জানাতে চাইলে জানান, ‘স্বপ্নটা ছোট। পাবলিক হেলথে পড়ার সময় মনে হয়েছে আমি পেশাগত স্বাস্থ্য (অকুপেশনাল হেলথ) বিজ্ঞানে কাজ করার জায়গা আছে। তাই পেশাগত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই। ভবিষ্যতে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অবদান রাখতে চাই।’

এইউডব্লিউ’র অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘এখানে প্রায় ১৭টা দেশের মেয়েরা পড়াশোনা করে। ফলে একটা কালচারাল ডাইভার্সিটি আছে। বেশির ভাগ শিক্ষক বিদেশি, তাদের অ্যাকসেন্টও ভিন্ন। প্রথমে ভাবছিলাম কীভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করব ইত্যাদি। কিন্তু এইউডব্লিউ’র শিক্ষা ব্যবস্থা এমন করে সাজানো যে, অ্যাকসেস একাডেমি লেভেলে সব ঠিক হয়ে যায়। এখানে প্রফেসরগণ অনেক বন্ধুসুলভ ও হেল্পফুল।’

অনেক সময় মনে হয়ে আর পারছি না, হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা হয় তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কি? এ ক্ষেত্রে মাহিম বলেন, ‘মনোবল হারানো যাবে না। আসলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যে জায়গায় যেতে চাও, সেই লক্ষ্যটা ঠিক রাখতে হবে। মনে রাখবে,সবার জীবনেই আপস অ্যান্ড ডাউন আছে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখবে এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

২০১ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে অদ্বিতীয়া। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৪৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৮৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।