শুধু আমার পরিবারে নয়, যে এলাকায় আমার জন্ম সেখানকার প্রথম গ্রাজুয়েট হয়েছি আমি: লিপি

চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত একটি এলাকার মেয়ে নাসরিন সুলতানা লিপি। তিনি তাঁর পরিবারে প্রথম নারী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পেরেছেন। এই পেরোনোর পেছনে আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। মনে সাহস নিয়ে সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে বর্তমানে কাজ করছেন বিব্লিওথেক সন্স ফ্রন্টিয়ার (বিএসএফ) অ্যাডভাইজর হিসেবে। সেই গল্প জানালেন প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অদ্বিতীয়ার গল্প অনলাইন অনুষ্ঠানে।

নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের মতো একটা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পেছনে প্রথম আলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, এইউডব্লিউতে বৃত্তির বিষয়ে প্রথম আলো থেকেই জানতে পারি এবং প্রথম আলোতে বৃত্তির জন্য আবেদন করি। পরে বৃত্তি পেয়েও যাই। এই বৃত্তি আমার পড়াশোনাকে অনেক সহজ করে দেয়। এ জন্য প্রথম আলোর কাছে কৃতজ্ঞ।’ শুধু আমার পরিবার নয়, আমার যে এলাকায় জন্ম সেখানকার প্রথম গ্রাজুয়েট হয়েছি আমি। বতর্মানে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কাজ করছি। এইউডব্লিউর ইংরেজির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ খুব সহায়তা করেছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহুজাতিক সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মাধ্যমে বহু কিছু শিখেছি, যা প্রতিনিয়ত কাজে লাগছে। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন কমসূচি থাকতো । প্রথম দিকে নাভাস ছিলাম , রাত জেগেছি , যত মিশেছি তত শিখেছি । এইউডব্লিউর কাজ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি পেশাগত জীবনে তা কাজে লাগছে ।

অদ্বিতীয়ার উদ্দেশে বলতে চাই, ‘ধৈয ধর, কোনো অবস্থাতেই মনোবল হারানো যাবে না। যা করবে আনন্দ নিয়ে করবে। তোমার যতক্ষন না স্যাটিসফিকশন আসবে ততক্ষন করবে । তুমি তোমার কাজ খুজে বের করে নাও প্রচুর হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। এইউডব্লিউতে অনেক সুযোগ আছে, সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। নতুন কিছু করার চিন্তা করতে হবে। নিজের মধ্যে লিডারশিপ গ্রো করাতে হবে। তাহলে কোনো বাধাই আর বাধা মনে হবে না।’

নাসরিন সুলতানা লিপি আরও বলেন, ‘আজ আমি স্বাবলম্বী নারী। এর পেছনে মা-বাবার সাপোর্ট যেমন ছিল তেমনি এইউডব্লিউ ও প্রথম আলো স্বপ্নপূরণে পথ দেখিয়েছে। উন্নয়ন সেক্টরে কাজ করতে চাই। পলিসি নিয়ে কাজ করতে চাই । মাস্টাস করিনি , করতে যাব।

২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে ‘অদ্বিতীয়া’। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৩৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি গত ২৮ মাচ ,বিকেল সাড়ে চারটায় একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।