গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নুদাপুরের মেয়ে শাপলা খাতুন। যে গ্রামে শাপলার বেড়ে ওঠা, সেখানে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ের জন্য চাপ এসেছিল শাপলার ওপরও। সে সময় তঁার ইচ্ছেশক্তির কাছে হার মেনেছেন সবাই। সঙ্গে মা আর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমর্থনও ওই ‘ফাঁড়া’ কাটাতে সহায়তা করেছে। শাপলা এখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
এইচএসসি পরীক্ষার পর শাপলা জানতে পারেন, অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীরা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে নানা ধরনের বৃত্তি নিয়ে বিনা খরচে পড়তে পারেন।
প্রতিবছর শাপলার মতো ১০ জন মেধাবী ছাত্রীকে ‘এইউডব্লিউ-প্রথম আলো ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ’ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখা পরিবারের প্রথম মেয়েকে এই বৃত্তি দেওয়া হয়। ২০১২ সাল থেকে চালু হয়েছে এ বৃত্তি। এখন পর্যন্ত ৪২ জন এই বৃত্তি নিয়ে পড়ছেন। তাঁদের কেউ এসেছেন রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে, কেউবা বান্দরবানের আলীকদম থেকে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ভিয়েতনামসহ ১৬টি দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের এম এম আলী রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে গিয়ে কথা হয় প্রথম আলোর বৃত্তি পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। গাইবান্ধার মেয়ে সিনথিয়া আরেফিন বলেন, ‘বিশ্বমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলে এখানে পড়ার খরচটা বেশি। বৃত্তি না পেলে এখানে পড়তে পারতাম না।’ শাপলারও একই রকম কথা, ‘বৃত্তি না পেলে হয়তো পড়াশোনা আর এগোত না। আমার গ্রামে আমিই প্রথম মেয়ে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি।’
এইউডব্লিউতে পড়াশোনা আন্তর্জাতিক মানের বলে গর্ব করেন শিক্ষার্থীরা। ভিন্ন ভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা থাকায় একে অপরের সংস্কৃতি জানার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চারটি বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ আছে।