পরিবারের প্রথম নারী গ্র্যাজুয়েট স্বপ্ন পূরণের পথে

অনামিকা দে। বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদিতে। খবর এটা নয় বরং খবর হলো, অনামিকা তাঁর পরিবারে প্রথম কন্যা সন্তান যিনি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এখন কাজ করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। একই সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্স করছেন একই বিবিদ্যালয়ে। ভবিষ্যতে দেশের বাইরে যাবেন অ্যাডভান্স ডিগ্রি অর্জনের জন্য। তাঁর এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে করণীয় যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে। ২১ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্ট এই অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনামিকা দে ২০১৩ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন।

অনামিকার এই অদ্বিতীয়া হওয়ার গল্প জানতে চাইলে জানান, ‘এইউডব্লিউ ‘তে ভর্তি হই ২০১৩ সালে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। পরে একদিন বাবা একটা আর্টিকেল আমার হাতে দেন। ওটা পড়েই এইউডব্লিউ সম্পর্কে জানতে পারি। ভালো করে জানার পরই আগ্রহটা তৈরি হয় আমার। এভাবে পরীক্ষা দেই, ভাইভা দেই এবং সুযোগও পেয়ে যাই। তবে ভর্তি হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ এইউডব্লিউ’র টিউশন ফি অনেক বেশি, যেটা পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। সবদিক চিন্তা করে বৃত্তির জন্য আবেদন করি। পরে বৃত্তিও পেয়ে যাই। বৃত্তি না পেলে এটা সম্ভব ছিল না। প্রথম আলোর সহায়তায় আমি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করি।’

আপনি এখন টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। এর পরের স্বপ্নটা কি? উত্তরে অনামিকা জানান, ‘আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার পাশাপাশি ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তর করছি। ভবিষ্যতে একজন উন্নয়নকর্মী হতে চাই। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আশা আছে, দেশের বাইরে থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ’ এর ওপর কাজ করব।’

এইউডব্লিউ’র নতুন একটা পরিবেশে নিজেকে খাপ-খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে অনামিকা বলেন, ‘প্রথম প্রথম অনেক চ্যালেঞ্জ ছিলো। আমি যেহেতু বাংলা মিডিয়াম থেকে আসা, সেহেতু সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে খাপ খাওয়াতে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে এইউডব্লিউ’র শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবেশ অনেক সহায়তা করেছে। সবার সঙ্গে মিশে কাজ করা, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবে, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। এভাবে আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেছি।’

নতুন একটা পরিবেশে খাপ-খাওয়ানো, পড়াশোনার চাপ, ভাষাগত সমস্যা ইত্যাদির কারণে অনেক সময় মনোবল হারিয়ে ফেলে অনেকে। তাই নতুন অদ্বিতীয়াদের জন্য পরামর্শ কি হবে জানতে চাইলে অনামিকা বলেন, ‘এইউডব্লিউ’তে যেটা হয়, আমি নিজের ওপর বিশ্বাস হারালেও এইউডব্লিউ বিশ্বাস হারায় না। প্রফেসর ও সহপাঠীরা অনেক সহায়তা করে। তা ছাড়া এইউডব্লিউ ‘তে মূল পড়াশোনায় যাওয়ার আগে ফাউন্ডেশন কোর্স করানো হয়। পরে ক্লাব, ওয়ার্কশপ এগুলোর মাধ্যমে সব ঠিক হয়ে যায়। তোমারা কখনো মনোবল হারাবে না। তোমরা নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখো। নিজেকে পৃথিবীর কাছে মেলে ধর। তোমাদের পাশে প্রথম আলো ট্রাস্ট যেমন আছে, এইউডব্লিউ আছে।’

একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি ও ক্লাবে যুক্ত থাকার তাগিদ দিয়ে অনামিকা বলেন, ‘আমি নিজে বিশ্বাস করি যে, শুধু একাডেমিক পড়াশোনা দিয়ে হয় না। এক্সট্রা কারিকুলার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে লিডারশিপ গ্রো করবে, নলেজ গেদার হবে যা প্রফেশনাল লাইফে অনেক সহযোগিতা করবে।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ অসচ্ছল, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে অদ্বিতীয়া। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৩৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।