শারমিন আক্তার, তাঁর পরিবারে প্রথম নারী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পেরেছেন। এই পেরোনোর পেছনে আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। মনে সাহস নিয়ে সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে বর্তমানে মাই সোলি ফাউন্ডেশনে কাজ করছেন। ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন গ্রামীণ ব্যাংকে। সেই গল্প জানালেন প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অদ্বিতীয়ার গল্প অনলাইন অনুষ্ঠানে।
শারমিন আক্তার বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা পাশের পর ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়ব, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। ভালো কিছু করব এই আশাই ছিল। কিন্তু সামাজিকভাবে ততটা সহজ ছিল না। আমার মায়ের কাছ থেকেই জানতে পারি চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের কথা। ভর্তি পরীক্ষা দিলাম এবং সেখানে টিকেও গেলাম।এইউডব্লিউ থেকে জানতে পারি স্কলারশিপ দিচ্ছে।এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ২০টি দেশের মেয়েরা সেখানে পড়ে। ওখানে গিয়ে খাপ খাওয়াতে প্রথমদিকে কষ্টই হচ্ছিল। কারণ আমি তো এইচএসসি পর্যন্ত বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছি। এক্ষেত্রে এইউডব্লিউ যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়। এইউডব্লিউ ইংরেজির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ খুব সহায়তা করেছে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহুজাতিক সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মাধ্যমে বহু কিছু শিখেছি, যা প্রতিনিয়ত কাজে লাগছে। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকতো । প্রথম দিকে নার্ভাস ছিলাম, রাত জেগেছি, যত মিশেছি তত শিখেছি । এইউডব্লিউর কাজ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি পেশাগত জীবনে তা কাজে লাগছে। নিজে কিছু একটা করব ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল । এখন সেই পথ চলাটা সহজ হচ্ছে ।
ইউনিভার্সিটি আমাদেরকে শিখিয়েছে কিভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে হয়,পড়াশোনার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজের সুযোগ করে দেয়। গ্রামীণ ব্যাংক নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে । মাই সোলি ফাউন্ডেশন বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করছে । যেহেতু আমি ডেভলপমেন্ট স্টাডিজে পড়াশোনা করেছি আমার এই কাজগুলো করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
আমার স্বপ্ন অনেক বড়। মানুষের পাশে থাকতে চাই। নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন স্কলারশিপ দিয়েছে। কিন্তু অনার্স পড়ুয়া অবস্থায় পরিবারের কাছে হাত খরচের টাকাটা চাওয়া যায় না। সেইটা প্রথম আলো ট্রাস্ট করেছে।
মাস্টার্স করতে দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করব। দেশে ফিরে এসে এই সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। নারীর ক্ষমতায়ন, দরিদ্রতা নিয়ে কাজ করতে চাই।
আমার নিজের কথা যদি বলি, দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন বাবা মারা যায়। মা, ভাই আমাকে মানুষ করে। মায়ের অবদান অনেক। মায়ের সাহায্য ছাড়া আজকে এতদূর আসতে পারতাম না । আমার মা একটা কথা বলতো, তুমি মেয়ে না তুমি মানুষ । তোমাকে টিকে থাকতে হবে । নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে শেখো । এখন পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেছি তাই এখন পরিবারের অনেক সিদ্ধান্ত আমি এখন নিতে পারি। যেটা আমি আগে পারতাম না।
যারা অদ্বিতীয়া তাদের জন্য পরামর্শ হলো, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে যারা পড়ছো বা যারা অদ্বিতীয়া তাদের সবারই নিজের একটা গল্প আছে। নিজেদের গল্পই তোমাকে সাহস জোগাবে। ভেঙে পরবে না। কারন তোমাদের পাশে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন আছে, প্রথম আলো ট্রাস্ট পাশে আছে । স্বপ্ন তোমার পূরণ হবে।
২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে অদ্বিতীয়া। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৩৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।
অনুষ্ঠানটি গত ২২ এপ্রিল,বেলা সাড়ে তিনটায় একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।