জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য এনার্জির ওপর দক্ষ হতে চান সিনথিয়া

সিনথিয়া আরেফীনের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ২০১৬ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে। ২০২০ সালে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিক্স বিষয়ে স্নাতক শেষ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে কিছু সময় বিরতিতে থেকে এখন দেশের বাইরে থেকে স্নাতকোত্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশা করছেন আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইউরোপের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেয়ে স্নাতকোত্তর পড়া শুরু করতে পারবেন। সিনথিয়ার এ সব বিষয়গুলো ওঠে আসে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২,বৃহস্পতিবার, বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে।

জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য এনার্জি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ সিনথিয়ার। এই বিষয়ে পড়াশোনা কেন করলেন এবং স্বপ্নটাই বা কি? এর উত্তরে তিনি জানান, ‘ আসলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হব এটা কখনো যেমন ভাবিনি, পরিবেশ নিয়ে কাজ করব এটাও ভাবিনি কখনো। এইউডব্লিউ'তে যখন আসলাম তখন প্রস্তুতিমূলক কোর্স করতে হয়। তখন প্রায় সব ধরনের বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত করানো হয়। পরে স্নাতকের মূল কোর্সগুলো পড়ানো হয়। আমি যেহেতু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলাম, তাই পাবলিক হেলথ বা পরিবেশ বিজ্ঞান আমাকে টানছিলো। এই দুটোর মধ্যে বেশি ভালো লাগত পরিবেশ বিজ্ঞান। এভাবে ক্লাস লেকচার, প্রফেসরদের পড়ানো সব মিলিয় পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রেমে পড়ে যাই।’

এইউডব্লিউ'তে প্রায় ১৯টি দেশের মেয়েরা পড়াশোনা করে। একটা মাল্টি-কালচারাল একটা পরিবেশ। শুরুর দিকের সময়টা কেমন ছিল জানতে চাইলে জানান, ‘ আমার জন্য লাইফ চেঞ্জিং বলা চলে। বাংলাদেশের পড়াশোনার গতানুগতিক ধারার বাইরে এইউডব্লিউ। এখানে ক্লাস নেওয়ার ধরন ভিন্ন, অনেক বেশি কমিউনিকেটিভ এবং ইন্টারেক্টিভ। যেমন আমরা গল্প করছি, কথা বলছি, ডকুমেন্টারি দেখছি-এরই মধ্যদিয়ে টপিক কভার হয়ে যাচ্ছে। এটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা ছিল।’

তারপর জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা, নবায়নযোগ্য এনার্জি ও হাইড্রো-এনার্জির কথা যদি বলি, আমার ভুটানের সহপাঠী ক্লাসে তার দেশের এনার্জি সেক্টর নিয়ে যখন কথা বলতেন তখন দেখতাম ভুটান নবায়নযোগ্য হাইড্রো-এনার্জিতে অনেক এগিয়ে আছে। সুতরাং বাংলাদেশেও তা আরও হতে পারে। যেমন, কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখান থেকেও নবায়নযোগ্য এনার্জির ওপর আগ্রহ তৈরি হয়। তা ছাড়া ইতিহাস, সাহিত্য, লিঙ্গবৈষম্য ইত্যাদি বিষয়সহ ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে পড়াশোনার সৌভাগ্য হয়েছে এখানে। আসলে আমার যারা বাংলা মাধ্যম থেকে আসা তারা একটা সংকোচের মধ্য থাকতাম, আমরা কি মতামত দেব? আমরা কি পারব? কিন্তু আস্তে আস্তে তা ঠিক হয়ে যায়, বললেন সিনথিয়া।

এইউডব্লিউ'তে ভর্তি প্রক্রিয়াটা কেমন জানাতে চাইলে সিনথিয়া বলেন, ‘এখানে ভর্তির প্রক্রিয়াটাও বাংলাদেশের গতানুগতিক প্রক্রিয়ার মতো না। খুবই ভিন্ন। এখানে ভর্তি পরীক্ষায় লজিক্যাল ও ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের ওপর জোড় দেওয়া হয়ে থাকে। ইংরেজি অংশে নিজের মতামত দিয়ে যুক্তি দাঁড় করাতে হয় আর গণিত অংশ সহজ থাকে। সাধারণ গণিত বই মোটামুটি অনুশীলন করলে পারা যায়। তবে নিজের মত প্রকাশ করার দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।’

জলবায়ু মোকাবিলায় আপনি কী ধরনের কাজ করতে চান এবং স্বপ্নটা কি? এর উত্তরে সিনথিয়া জানান, ‘এখানেও আমাকে আবার ক্লাসে ফেরত আসতে হচ্ছে। পরিবেশের অনেকগুলো ইস্যু আছে। সেগুলোর ক্লাস করেছি। কোর্সগুলো করতে করতে নবায়নযোগ্য এনার্জির ওপর আগ্রহ তৈরি হয়। আর এভাবেই ২০২০ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিক্স বিষয়ে স্নাতক শেষ করি। পরে কিছু সময় বিরতিতে থেকে এখন দেশের বাইরে থেকে স্নাতকোত্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশা করছেন আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইউরোপের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেয়ে স্নাতকোত্তর পড়া শুরু করতে পারবেন।’

বর্তমানে যারা পড়ছে এবং নতুন অদ্বিতীয়াদের জন্য পরামর্শ কি হবে জানতে চাইলে সিনথিয়া বলেন, ‘ প্রথমত বলব, এইউডব্লিউ খুবই ওয়েলকামিং একটা জায়গা। এখানে প্রচুর ‍রিসোর্স আছে। এগুলো ব্যবহার করে নিজেকে দক্ষ করতে হবে। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। যদি কখনো কোন বিষয়ে খটকা লাগে, সিনিয়র থেকে শুরু করে প্রফেসরের কাছে বলতে হবে। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। এখানে সবাই অনেক আন্তরিক। ’

বাবা-মার অনুভূতি কি সিনথিয়াকে নিয়ে? এর উত্তরে তিনি জানান, ‘আমি আমার পরিবার তথা বাড়ি প্রথম স্নাতক সম্পন্নকারী নারী হিসেবে নয় বরং একজন মানুষ হিসেবে আমার যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে সেটাকে তাঁরা নোটিশ করেন। বাড়ির কোনো বিষয়ে ডিসিশন নেওয়ার সময় আমাকে ডাকে, এটা আমাকে অনেক গর্বিত করে।’

উল্লেখ্য, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ অসচ্ছল, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন।

২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নতুনভাবে নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’ নামে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৪৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৮৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন (২০২১ পর্যন্ত)। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।