মনি মুন্ডা, চা বাগান শ্রমিকের মেয়ে। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দুরের স্কুলে যাওয়ার পথে যেতে যেতে পড়তেন। কলেজে উঠে পড়াশোনা করা যেন আরও মুশকিল হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বাসায় পড়াশোনা করার কোনো পরিবেশ ছিল না। মা প্রায়ই বলতেন, 'সবাই তো সপ্তাহে দুই একদিন কলেজে যায়। তোর কেন প্রতিদিন কলেজে যেতে হয়?' শুধু মনি জানতেন, কেন এত বাঁধা পার হয়ে, এত কষ্ট করছেন মনি। বাবার সাহস আর সহযোগিতায় কলেজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন মনি। কিন্তু স্কুল কলেজের বেশ ভালো ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে ফেল করে বসলেন তিনি। কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি তাঁর ফলাফল এমন হতে পারে। মনে মনে ভেঙে পড়া মনি জানতেন কেন এমনটা হলো।
এরপর শুরু করলেন নতুন যুদ্ধ। পারিপার্শ্বিকতার সাথে যুদ্ধ করে কীভাবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পাস করলেন, কীভাবে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডাব্লিউ) ভর্তির সুযোগ পেলেন, আজ তা মনির কাছে স্বপ্নের মতো লাগে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। সুযোগও পেয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন পরিচিত একজনের মাধ্যমে জানতে পারলেন শ্রীমঙ্গলে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এতটুকু জানতেন যে, অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে এখানে ভর্তির সুযোগ পেলে জীবন বদলে যাবে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও প্রশস্ত হবে। মনি ছাত্রী হিসেবে যে ভালো তা আরও একবার প্রমাণ হলো। ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলেন এইউডাব্লিউতে। একই সঙ্গে পেয়ে পেলেন অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি যা তাঁর শিক্ষার পথকে আরও মসৃণ করেছে। মনির এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো পরিবারের প্রথম নারী, যাঁরা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারছেন না, তাঁদের অনুপ্রাণিত করার জন্য দেওয়া হয় আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি। পরিবারের প্রথম নারী, অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে যিনি প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছেন, তিনি আমাদের অদ্বিতীয়া। ২০২০ সালে এই শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া ১০ জনের সবাই মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার চা-শ্রমিকের সন্তান। তাদেরই একজন মনি মুন্ডা।
লেখক: সমন্বয়ক, প্রথম আলো ট্রাষ্ট