সোমা গোস্বামীর জন্ম ২০০০ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। বাবা চা বাগানের কর্মী। সংসারের বড় মেয়ে হিসেবে সোমা বড় হতে হতে যেমন পরিবারের অভাবটা দেখেছেন, তেমনি সমাজে ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে যে একটা ব্যবধান আছে, সেটিও বুঝেছেন। চা বাগানের বৈষম্যমূলক পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা এই সোমাকে দেখতে হয়েছে সমাজের নানা চেহারা। পুরোহিত বাবা বিশ্বাস করতেন তাঁর মেয়েকে একই সঙ্গে দুর্গা, কালী, সরস্বতী হতে হবে। ছোটবেলা থেকেই সোমাকে স্বাবলম্বী করে বড় করেছেন। সেই সোমা বর্তমানে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়াশোনা করছেন। অর্থনীতি কিংবা পাবলিক হেলথে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে চান।
সোমা জানালেন, ‘আমার বান্ধবীর মাধ্যমে আমি প্রথম এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের খবর শুনি। আমি তখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি এবং ভর্তি পরীক্ষা দেই। ভাইভা ভালো না হওয়ায় আমি সুযোগ পাইনি। তখন আমি ভর্তি হই মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে। মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। কিন্তু দ্বিতীয়বারেও আমি ভর্তি হতে পারিনি। কিন্তু মেনে নিতে পারছিলাম না যে আমি ভর্তির সুযোগ পাইনি। এ ছাড়া আমার চারপাশের যারা ছিলেন তারা আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করতে শুরু করলেন। তখন একটা জিদ চেপে বসল। তৃতীয়বারের মতো পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু কাউকে জানালাম না যে, আমি পরীক্ষা দেব। এমনকি বাসার কাউকেও না। অবশেষে আমি সুযোগ পেয়ে যাই এখানে পড়ার। আমার তখন মনে হয়েছিল, সেই ছোটবেলা থেকে আমার বাবা মা আমাকে যা দিয়েছেন আমি তাঁর কিছুই দিতে পারিনি। এই খবরটায় হয়ত তাদের সামান্য হলেও খুশি করতে পেরেছি।
ক্যাম্পাস খুলে যাওয়ার পরে সোমা এখন ক্যাম্পাসে চলে এসেছেন। ক্যাম্পাসের বড় বোনেরা যাঁরা আছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যাঁরা আছেন তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁর ভবিষ্যতের পথটা বেছে নিতে চান। কিন্তু খুব দৃঢ়ভাবে সোমা জানান, 'আমার জীবনের স্বপ্ন হলো, আর্থিকভাবে এবং মানসিকভাবে নিজেকে একটা শক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়া।
সোমা দৃঢ চিত্তে বলেন, ‘আমার জীবনের লক্ষ্য দুইটা। প্রথম, যেহেতু আমার বাবা মায়ের বয়স হয়েছে, সারা জীবন তাঁরা আমাদের পেছনে তাঁদের জীবনের সবটুকু দিয়েছেন। তাঁদের একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই। আমার ছোট দুই বোন এবং এক ভাইয়ের পড়াশোনা দায়িত্ব নিতে চাই। দ্বিতীয়ত, পরিবারের পাশাপাশি আমি আমার সম্প্রদায়ের জন্যও কাজ করতে চাই। আমি চাই আমার সম্প্রদায়ের কিছু সংশোধন, কিছু পরিবর্তন আনতে, যাতে করে আমার সম্প্রদায়ের মেয়েরাও এগিয়ে যেতে পারে। সার্বিকভাবে আমি নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেন আমি কিছু বললে আমার সমাজ সেটি মূল্যায়ন করে।’