একদম ছোটবেলা থেকে আপনার গল্পটা শুনতে চাই।
রেখা দাশ: আমরা তিন বোন, এক ভাই। আমি সবার বড়। আমি মিডল-ক্লাস পরিবারের মেয়ে। গ্রামে থেকে পড়াশোনা করেছি। গ্রামের লোকজন বলত—মেয়েদের পড়াশোনা করানোর মানে নেই। বিয়ে দিয়ে দিতে বলত। কিন্তু আমি খুব শক্ত ছিলাম। আমার পড়াশোনা করতে ভালো লাগত। একদিন স্কুলে না গেলে মন খারাপ হতো।
আপনার বাবা-মা পাশে ছিল কি?
রেখা দাশ: পাশে ছিল কিন্তু আশপাশের মানুষ যখন বলত, তখন অনেক হতাশ হয়ে যেতেন। আমি যে স্কুলে পড়তাম ওই স্কুলের শিক্ষকগণ আমার পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা করেছেন। তখন বাবা-মা বিয়ের বিষয়ে কিছু বলতে পারত না।
এইউডব্লিউ’র খবর পেলেন কিভাবে?
রেখা দাশ: আমি এইচএসসি পাশের পর আমার বিয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। তখন আমার এক স্যার এইউডব্লিউর কথা জানান। এখানে চা-বাগানের মেয়েদের বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার করার সুযোগ বলে জানান। পরে স্যারের সহযোগিতায় এইউডব্লিউতে আবেদন করি। পরে পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই। এভাবেই এইউডব্লিউর যাত্রা শুরু হয় আমার।
এইউডব্লিউতে এসে কি কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন?
রেখা দাশ: ২০২০ সালে এইউডব্লিউতে ভর্তি হই। তখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছিল, ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। সশরীরে ক্লাস হতো না। অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। পরে যখন ক্যাম্পাস যাই, তখন অনেক সমস্যা হতো। ভাষাগত সমস্যা, যোগাযোগ, বিদেশি রুমমেট—এগুলো মানাতে সময় লেগেছে। প্রফেসরগণ, সিনিয়রেরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে।
এইউডব্লিউতে ক্লাসে পড়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু বলেন।
রেখা দাশ: এইউডব্লিউর ক্লাসগুলো কমিউনিকেটিভ। সবাইকে আলোচনায় অংশ নিতে হয়। এতে করে সবার মধ্যে গ্রোমিং হয়ে যায়। প্রজেক্টর দিয়ে পাওয়ার-পয়েন্টে ক্লাস নেওয়া হয়। গ্রুপ ওয়ার্ক করানো হয়। সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হয়, কারণ এখানে ৫ নম্বর থাকে।
নিজেকে ১০-এ কত নম্বর দেবেন রেখা?
রেখা দাশ: আমি গড়ে নিজেকে ১০-এ ৭ দেব। নিজেকে আরও ইমপ্রোভ করছি। কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়, কীভাবে কমিউনিকেট করতে হয়, কোপ-আপ করতে হয়, সেগুলো শিখেছি।
প্রতিকূলতা অতিক্রম করছেন, এখন কি স্বপ্ন দেখেন?
রেখা দাশ: নিজেকে একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে দাঁড় করাব। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করব, গবেষণা করব। প্রথমে চাইতাম একজন নার্স হতে, সেটা হয়নি। এখন জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আছে।
বাবা-মার অনুভূতি কেমন?
রেখা দাশ: এইউডব্লিউতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর খুশিতে মা অনেক কান্না করেছেন। বাবা-মা এখন স্বপ্ন দেখেন, আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করব। বিয়ের বিষয়ে পরে দেখা যাবে—এটা বলেন তাঁরা।
এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
রেখা দাশ: তাদের একটা কথাই বলল সেটা হলো, জীবনে সমস্যা থাকবেই। আর আমাদের সমাজে মেয়েদের সমস্যা আরও বেশি। সেগুলোকে অতিক্রম করতে হবে। মনোবল নিয়ে, এগিয়ে যেতে হবে, সফলতা আসবেই।