প্রথম চাকরি, নতুন পরিবার, প্রথম ঈদ

অদ্বিতীয়া তানিয়া আক্তার।

তানিয়া আক্তারের এবারের ঈদ যেন একেবারে অন্য রকমভাবে কাটছে। তানিয়া আক্তার প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। অসচ্ছল পরিবারের প্রথম নারী, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে প্রতিবছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ বৃত্তি কার্যক্রমে সহযোগিতা করে ট্রান্সকম। ২০১৭ সাল থেকে এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। শিক্ষাবৃত্তিটির নতুন নাম হয় ‘অদ্বিতীয়া’। ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বৃত্তি পেয়েছেন ৮৮ ছাত্রী।

প্রথম আলো ট্রাস্টের অনলাইন আয়োজন অদ্বিতীয়ার গল্প অনুষ্ঠানে নিজের গল্প বলছিলেন তানিয়া আক্তার।

তানিয়া আক্তার ২০১৭ সালের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী। স্নাতক শেষে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগে ইন্টার্নশিপ শেষ করে সম্প্রতি এক্সিম ব্যাংকে ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন। ৯ এপ্রিল ২০২৩ বিয়ের বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছেন। ভোরের আলো যেমন রাতের অন্ধকার দূর করে, তেমনি যেন তানিয়ার অন্ধকার সময়গুলো কেটে যাচ্ছে। তানিয়ার বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। সংসার কোনোমতে চলে গেলেও মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তানিয়ার এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে স্থপতি ইকবাল হাবীব যখন জানলেন টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তানিয়ার, তখন তিনি তানিয়ার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। এভাবে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে যখন ভাবছিলেন কোথায় ভর্তি হবেন, তখনই জানতে পারেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) আর আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদ্বিতীয়া শিক্ষা তহবিলের কথা। এইউডব্লিউয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরিবারের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কন্যাসন্তান হিসেবে তানিয়া পেয়ে যান অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তিও।

তানিয়া বলেন, ‘এই শিক্ষাবৃত্তি যে কেবল আমার দায়িত্ব নিয়েছে, তাই-ই নয়। আমার বোনের পড়াশোনায়ও সহায়তা করেছে। এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলে আমি আজকে এই জায়গায় আসতে পারতাম না। এখান থেকেই আমি আমার স্বপ্ন পূরণের, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। আমার পথচলার পুরোটা সময় পাশে থাকার জন্য স্থপতি ইকবাল হাবীব থেকে শুরু করে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, আইডিএলসি, প্রথম আলো ট্রাস্টসহ সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ এবারের ঈদ কেমন কাটবে জানতে চাইলে তানিয়া বলেন, ‘এবারের ঈদটা আমার কাছে একদম অন্য রকম। জীবনের প্রথম চাকরির পর প্রথম ঈদ। বিয়ের পর প্রথম ঈদ। সব কিছু মিলিয়ে অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।’ আমরাই চাই, জীবনের কঠিন সময়গুলো পার করে যেই তানিয়া এতদূর এসেছেন, সেই তানিয়া সামনের দিনগুলোয় এমনই অদ্বিতীয়া থাকবেন।