ক্যানসার বায়োলজির ওপর উচ্চতর গবেষণা করার ইচ্ছা মার্জিয়ার

আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া খুলনার দৌলতপুর উপজেলার মেয়ে মার্জিয়া ইসলাম টিয়া।

খুলনার দৌলতপুর উপজেলার মেয়ে মার্জিয়া ইসলাম টিয়া। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছ লতা তার পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মার্জিয়া থেমে থাকার পাত্র নন। নিজের ও তাঁর মায়ের চেষ্টায় স্নাতক পর্যন্ত যেতে পেরেছেন। তিনি ২০১৯ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পান। শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বায়োইনফরমেটিক্স অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন তিনি।

স্বপ্ন দেখেন দেশের বাইরে যাবেন, উচ্চশিক্ষা নিয়ে গবেষণা করবেন। সেই চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পরিবারের প্রথম নারী হিসেবে স্নাতক পর্যায়ে যেতে পারার নানা বিষয় ওঠে এল ৩০ সেপ্টেম্বর, সোমবার, ২০২৪, বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

মার্জিয়া ইসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছেন তখন আসবাবপত্রের ব্যবসায় সর্বস্বান্ত হয়ে বাবা মো. তুহিন ইসলাম ঘরবন্দী হয়ে পড়েন। একদিকে সংসার, অন্যদিকে মেয়ের পড়াশোনা। একেবারেই অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। তাই বাধ্য হয়ে মা মুকুল জাহান শুরু করেন ঘরে ঘরে গিয়ে বাচ্চাদের পড়ানো। মাস শেষে যা পান তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে গেলে তো খরচ অনেক পড়বে। তাই কিছুটা শঙ্কায় ছিলেন মুকুল জাহান। মেয়ে বৃত্তি পাওয়ায় তাঁর সেই শঙ্কাও দূর হয়েছে।

এত টানাপোড়েনের মধ্যেও এইউডব্লিউতে কিভাবে এলেন? এর উত্তরে মার্জিয়া জানান, ‘অনেক কষ্ট হয়েছে এ পর্যন্ত আসতে। মা অনেক সহযোগিতা করেছেন আমাকে। সবকিছু করেছেন আমার জন্য। এইচএসসির পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ হয়নি। আমি অনেকটা ভেঙে পড়ছিলাম। তখন মা-ই আমাকে সাহস দিয়েছেন। এদিকে মা গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ছিলেন। তারাই মাকে এইউডব্লিউর সম্পর্কে জানায়। পরে পরামর্শ নিয়ে আবেদন করি, পরীক্ষা দিয়ে পাস করি। চূড়ান্ত ভাইভাতে উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তিসহ ভর্তির জন্য অফার লেটার পাই। সেই সময়টা আমার কী যে আনন্দ লেগেছে বোঝাতে পারব না। তারপর ভর্তি হয়ে ক্যাম্পাসে যাই।’

ক্যানসার বায়োলজি নিয়ে পড়তে চাই। এটা নিয়ে গবেষণা করছি এখন। এই বিষয়ের ওপর উচ্চতর গবেষণা করার ইচ্ছা আছে— মার্জিয়া ইসলাম।

প্রথম যখন চট্টগ্রামের যান, তখন কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি? এর উত্তরে মার্জিয়া জানান, অনেকই বলত—আসলেই আমি চান্স পেয়েছি কি? মেয়ে এত দূর কেন যাবে, কীভাবে থাকবে?’

এইউডব্লিউতে গিয়ে কেমন অনুভূতি হলো? মার্জিয়ার সহজিয়া উত্তর। বাংলা মাধ্যম থেকে গিয়েছে। এদিকে এইউডব্লিউর পরিবেশ অন্যরকম। সব সময় ইংরেজিতে কমিউনিকেট করতে হয়। সে জন্য প্রথম প্রথম চুপচাপ থাকতাম। তবে সব ঠিক হয়ে গেছে। অনেক অনুশীলন করেছি। এখন অনায়াসেই ইংরেজি বলতে পারি।

 এইউডব্লিউর প্রথম দিককার মার্জিয়া আর আজকের মার্জিয়া আত্মবিশ্বাসের রেটিং করতে বলেতে কত দেবেন আপনি? ১০ এ নিজেকে ৭ দেবেন জানালেন মার্জিয়া।

 এইউডব্লিউতে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিটাস্কিং কাজ করতে হয়। এগুলোতে কীভাবে নিজেকে মানিয়েছেন? উত্তরে মার্জিয়া জানালেন, ‘এইউডব্লিউতে সারা বছর অনেক প্রোগ্রাম থাকে। কারও যাতে কোনো সমস্যা না হয় এ রকম টাইমে প্রোগ্রামগুলো থাকে। আমি জয়েন করেছি। আসলে সময়টা কাজে লাগালে আস্তে আস্তে সব হয়ে যায়।’

‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ অনলাইন অনুষ্ঠানে নিজের গল্প ও স্বপ্নের কথা তুলে ধরলেন মার্জিয়া ইসলাম।

মায়ের স্বপ্ন কি টিয়াকে নিয়ে? এর উত্তরে মার্জিয়া জানালেন, ‘আম্মু চানা আমি আরও পড়াশোনা করি। আমি যত দূর যেতে চাই আমার পাশে থাকবেন তিনি।’

মার্জিয়াও তাঁর স্বপ্নের কথা জানালেন। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আছে। ক্যানসার বায়োলজি নিয়ে পড়তে চাই। এটা নিয়ে গবেষণা করছি এখন। এই বিষয়ের ওপর উচ্চতর গবেষণা করার ইচ্ছা আছে।’

এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের উদ্দেশ্যে মার্জিয়া বলেন, ‘যোগাযোগ বাড়াও, বন্ধু বাড়াও। এইউডব্লিউ যে সুবিধাগুলো দেয় সেগুলো কাজে লাগাও। দেখবে সব সুন্দর হবে সবকিছু।’

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবাসুলতানা।