‘শিক্ষাবৃত্তি না পেলে এইউডব্লিউতে স্নাতক পড়া সম্ভব হতো না’

প্রথম আলো এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ’ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম।

বরিশালের ঝালকাঠি জেলার সদর থানার শিরযুগ গ্রামের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম। বাবা কৃষি কাজ ও ছোট একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। বাবার আয়ে ৪ সদস্য পরিবারের খরচ চালানোই কঠিন ছিল। সেখানে সাদিয়া ও তাঁর ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ দেওয়া কঠিন ছিল। তা ছাড়া গ্রামের প্রতিবেশিরা বলতেন, ‘মেয়েদের এতো পড়াশোনা করিয়ে কি হবে, বিয়ে দিয়ে দাও’। পরিবারের অভাব ও প্রতিবেশিদের নানা কথা উপেক্ষা করে নিজ ইচ্ছা শক্তির বলে এগিয়েছেন সাদিয়া। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ঢাকার ই-জেন কনসালট্যান্ট লিমিটেডে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত। এখানে তিনি ২০২০ এর জানুয়ারিতে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।

আজকের এই জায়গায় আসার পেছনে ছিল অনেক প্রতিবন্ধকতা। নিজের ইচ্ছাশক্তির বলে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করলেন। এবার স্নাতকে ভর্তি হবারর পালা। কিন্তু কীভাবে খরচ বহন করবেন, এই চিন্তায় পড়ে যান তিনি। সেই সময়টাতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলোর ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ’এর বিষয়ে জানতে পারেন। সাদিয়া বলেন, ‘বৃত্তির বিষয়ে বিস্তারিত জেনে আমি খুব আশান্বিত হলাম। আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করি। অবশেষে সবগুলো স্টেপ অতিক্রম করে শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হলাম। আমি তখন অনেকটা নির্ভার হতে পারলাম। আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য এইউডব্লিউ এবং প্রথম আলোকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এই শিক্ষাবৃত্তি না পেলে এখানে পড়াশোনা করা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। কারণ এইউডব্লিউতে ভর্তির সময় ১২ হাজার মার্কিন ডলার দিতে হয়, যা আমার পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হতো না।’

প্রথম আলো এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ’ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম।

২০১২ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ’ দেওয়া শুরু হয়। ওই বছর যে ১০ জন শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সাদিয়া ইসলাম অন্যতম। প্রতি বছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী এ রকম ১০ জনকে দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি। ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন।

২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নতুনভাবে নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’শিক্ষাবৃত্তি নামে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৫৬ জনসহ ২০২২ পর্যন্ত মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।