দীপা সিংয়ের বাবা গজেন সিং মিরতিংগা চা–বাগানের একজন শ্রমিক। মা সমিতা সিং গৃহিণী। প্রতিদিন ছয় কিলোমিটার হেঁটে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা দীপাকে স্কুলে যেতে হতো। অনেক কষ্টে কলেজ পেরিয়েছেন। কিন্তু তারপর? বাবা বলে দিয়েছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সামর্থ্য তো আমার নাই মা।’ কোচিং করার খরচই–বা কে দেবে? এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পুরোনো বই সংগ্রহ করে ভর্তির প্রস্তুতি নেন দীপা। তিনি বলছিলেন, ‘সবাই বাবা-মাকে বলত, মেয়েদের এত পড়াশোনা করানো ঠিক না, বিয়ে দিয়ে দাও। মা-বাবাও সে রকমই ভাবছিলেন। কিন্তু আমি একরকম যুদ্ধ করেই ভর্তি পরীক্ষা দিই। প্রথমবার সুযোগ হয়নি। পরের বছর আবার পরীক্ষা দিয়ে এইউডব্লিউতে সুযোগ পাই। বৃত্তি পেয়ে আমার মনোবল বেড়ে যায়। এখন আমার একটাই লক্ষ্য—ভালোভাবে পড়াশোনা করে চা–বাগানের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের নিয়ে কাজ করা।’
উল্লেখ্য, দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম মেয়েসন্তান, যাঁরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া বৃত্তি। চট্টগ্রাম অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তি দেওয়া হয়। তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি মওকুফসহ নানা সুবিধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগিতায় ৪২ জন এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহযোগিতায় ৫৬ জনসহ মোট ৯৮ জন এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০২২ সালে বৃত্তিপ্রাপ্ত ১০ জন অদ্বিতীয়ার মধ্যে অন্যতম দীপা সিং। পরিবারের প্রথম মেয়ে হিসেবে স্নাতক পড়ছেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে।