রেখা দাশ চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে যাওয়া পটিয়া চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারের সন্তান। তিনি তাঁদের জনগোষ্ঠী এবং তাঁর পরিবারের প্রথম কোনো সদস্য যিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন।
রেখা দাশ বলেন, ‘আমার মা-বাবা, ঠাকুরদা, ঠাকুর মা, দীর্ঘদিন চা বাগানের শ্রমিক ছিলেন। এখন সেই চা বাগান নেই। এদিকে আমাদের নিজস্ব কোনো ঘরভিটা বা জমি না থাকায় বাবা অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। নিয়মিত কাজের সংকট থাকলে মাঝেমধ্যে কাঠ কেটেও সংসার চালান। আমার মাও সংসার চালানোর তাগিদে অন্যের জমিতে কাজ করেন। ছোটবেলা থেকে আমার পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। কিন্তু এই ইচ্ছাকে প্রায়ই তীব্র দারিদ্র্যের ও অনিরাপত্তায় থমকে যেত। পাশাপাশি নারীবিদ্বেষ, বন্ধুদের ঝরে পড়ার হতাশা, বাল্যবিয়ের চাপ তো ছিলই। কিন্তু আমি কখনো হাল ছাড়িনি।’
আমি খুবই আনন্দিত যে আইডিএলডি ও প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার সঙ্গে আছে। এখন পড়ালেখার প্রতি আমার মনোযোগ আরও অনেক বেড়েছে।
এই হাল না ছাড়া রেখা স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতনের শিক্ষকদের জোগানো সাহস আর নিজের চেষ্টায় এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এই এক একটি পর্যায় অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাস হয়ে ওঠেন তিনি। মা-বাবাও ধীরে ধীরে কিছুটা বুঝতে পারেন, পাশেও দাঁড়ান। এইচএসসি পাসের পর তাঁর এক শিক্ষক এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের খরব দেন। খোঁজ নিতে গিয়ে জানেন, এখানে চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়েদের জন্য বিশেষ বৃত্তি আছে। আর ঠেকায় কে! একদম ওঠে পড়ে লেগে গেলেন। কারণ এটাই তাঁর সুবর্ণ সুযোগ। পরে আবেদন করেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পূর্ণ বৃত্তিতে ভর্তির সুযোগ পান। এই হলো সেই রেখা দাশ। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাসে থেকে স্নাতকে পড়াশোনা করছেন।
পরিবারের প্রথম নারী, যিনি দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছেন, প্রতি বছর এরকম ১০ জনকে অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া বৃত্তি। এই বৃত্তি বইপত্র ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যয় বহন করে। অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি-২০২০ ব্যাচের ১০ জনের মধ্যে মনি পাল ড্রপআউট হন। তখন মনি পালের স্থলে রেখা দাশকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ফলে রেখা দাশ আইডিএলডি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তির অন্তর্ভুক্ত হন।
অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার পর রেশা দাশ বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে আইডিএলডি ও প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার সঙ্গে আছে। এখন পড়ালেখার প্রতি আমার মনোযোগ আরও অনেক বেড়েছে। কারণ এই বৃত্তি আমার খাতা, কলম, আরও অন্যান্য খরচ বহনে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে আমি একজন সমাজ সেবক হয়ে আমার মতো আরও হাজারটা রেখার পাশে দাঁড়াব— এই স্বপ্ন নিয়ে আমি পথ চলা শুরু করেছি।’