একটা ডিম চারজন ভাগ করে খেয়েছি

দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম মেয়েসন্তান, যাঁরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি। চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ার সুযোগ পান তাঁরা। আবাসন, টিউশন ফি মওকুফসহ নানা সুবিধা তাঁদের দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সাল থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগিতায় ৪২ এবং ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহযোগিতায় ৬৬ জনসহ মোট ১০৮ জন এ পর্যন্ত এই বৃত্তি পেয়েছেন। ৫২ জনের স্নাতক শেষ হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই দেশে–বিদেশে ভালো অবস্থানে আছেন। পড়ুন ২০২৩ সালে বৃত্তি পাওয়া শাকিলা আক্তারের গল্প।

প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছেন শাকিলা আক্তার। পেয়েছেন আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃ্ত্তি।ছবি: সৌরভ দাশ

বাবা ছিলেন রিকশাচালক। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতেন। বাকি দিনগুলোতে কাজ করতেন। বাবা কাজে গেলে আমাদের ঘরে খাবার জুটত, না গেলে চাল ধার করতে হতো। মা-বাবা অবশ্য বেশির ভাগ সময় না খেয়েই কাটাতেন। আমাদের দুই ভাই-বোনকে পাঠিয়ে দিতেন নানির বাড়ি, যেন অন্তত ক্ষুধাটা নিবারণ করতে পারি। না খেয়ে কাজ করে আমার দিনমজুর মা কতবার যে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন! এমনও হয়েছে, ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে পেটে ওড়না বেঁধে রেখেছেন শক্ত করে। এত পরিশ্রমের পরও কখনো পড়ালেখা বন্ধ করে দেননি। ধার করে বেতন দিয়েছেন। টাকা বাঁচাতে অনেক সময় আমরা একটা ডিমভাজা চারজন ভাগ করে খেয়েছি।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর পড়ালেখার খরচ বেড়ে গেল। বাধ্য হয়েই আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো নানির বাড়ি। সেখানেও অবস্থা অত ভালো ছিল না। মামা-খালারা তখন ছোট, তবু তারাও কোনো না কোনো কাজ করতেন। সবার সাহায্যেই চলত আমার পড়ালেখা।

বাবা মারা গেছেন পাঁচ মাস হলো। এখনো মা কষ্ট করেই যাচ্ছেন, যেন আমি নিজের একটা পরিচয় দাঁড় করাতে পারি। আমি চাই পড়ালেখা শেষে ভালো একটা চাকরি করব। মাকে আর কাজ করতে দেব না। তাঁর দায়িত্ব নেব। এখন অবশ্য মাকে নিয়ে খুব চিন্তা হয়। প্রায়ই তিনি অসুস্থ থাকেন, কাজে যেতে পারেন না। সংসারের খরচই চলে না, আমার হাতখরচ সেখানে বিলাসিতা। প্রথম আলো ও আইডিএলসির এই উপবৃত্তি তাই আমার খুব উপকারে আসবে।