তানিয়া এখন ইন্টার্ন করেন

তানিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

বাবা সবজি বিক্রেতা। তাঁর সামান্য আয়ে চলে পুরো সংসার। মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়াটা বাবার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নটা তছনছ হওয়ার উপক্রম দেখে ভেঙে পড়লেন তানিয়া আক্তার।

মিরপুরে একটা ভাড়া বাসায় থাকেন তানিয়ারা। আশপাশের অনেকেই তানিয়াদের চেনেন। তেমনই এক প্রতিবেশী তানিয়ার পড়াশোনার আগ্রহের কথা জানতে পেরে স্থপতি ইকবাল হাবীবকে বলেন। তানিয়ার পাশে দাঁড়ান ইকবাল হাবীব, তাঁর পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। মিরপুর বাংলা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে ভর্তি হন তানিয়া। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই এসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কমার্স কলেজে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত তানিয়ার পড়াশোনাসহ সব খরচ বহন করেন ইকবাল হাবীব। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ভর্তির সুযোগ পান তানিয়া। পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে পেয়ে যান আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তি ‘অদ্বিতীয়া’।

নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। অসচ্ছল পরিবারের প্রথম নারী, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে প্রতিবছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ বৃত্তি কার্যক্রমে সহযোগিতা করে ট্রান্সকম। ২০১৭ সাল থেকে এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। শিক্ষাবৃত্তিটির নতুন নাম হয় ‘অদ্বিতীয়া’। ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বৃত্তি পেয়েছেন ৮৮ ছাত্রী।

তানিয়া আক্তার ২০১৭ সালের অদ্বিতীয়া পাওয়া শিক্ষার্থী। সম্প্রতি স্নাতক শেষ করে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগে ইন্টার্নশিপ শুরু করেছেন।

তানিয়া আক্তার বলেন, ‘শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার পর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই বৃত্তি যে কেবল আমার পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে, তা-ই নয়; বৃত্তির টাকা দিয়ে আমার ছোট বোনের কোচিংয়ের খরচ হয়ে যেত। আমাদের দুই বোনের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে এই বৃত্তি। আমার পথচলার পুরোটা সময় পাশে থাকার জন্য স্থপতি ইকবাল হাবীব থেকে শুরু করে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, আইডিএলসি, প্রথম আলো ট্রাস্টসহ সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

‍সূত্র: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ নারীমঞ্চে প্রকাশিত।