অনলাইন আয়োজন 'অদ্বিতীয়ার গল্প'
জনস্বাস্থ্যে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চান গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে খ্রীস্টিনা
প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন 'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে এ পর্বের অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহের গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে খ্রীস্টিনা কান্তা রিছিল। তিনি ২০১৮ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পান। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি। এখন একটাই ইচ্ছা তাঁর, বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে থেকে জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর করার। গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে হিসাবে তাঁর এই পথ চলার নানা বিষয় ওঠে এল ৩১ মে ২০২৩, বুধবার, বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।
খ্রীস্টিনা কান্তা রিছিল তাঁর পরিবারে গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়া প্রথম নারী। পরিবারের প্রথম তো বটেই, এমনকি স্নাতক পর্যায়ে পড়া গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে হিসেবে এইউডব্লিউতেও প্রথম তিনি। ময়মনসিংহ থেকে এইউডব্লিউতে যাত্রার পথটা বলতে গিয়ে খ্রীস্টিনা জানান, ‘আমার জন্ম বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহে। স্কুল, কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়—এভাবে এগিয়ে যাই। ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামে যখন যাই তখন কিছুটা ভয় ছিল। এত দূরে, কীভাবে থাকব, কি করব! কারণ ঘর থেকে কখনো বের হইনি। সেই আমি প্রথম নিজ এলাকা থেকে এত দূরে পড়ছে যাওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে সাহসটা ছিল আমার। আর বাবা এ ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’
আরও যুক্ত করে খ্রীস্টিনা বলেন, ‘আমার বাবার আর্থিক অবস্থা যেহেতু ভালো ছিল না, তাই প্রাইভেটে পড়ার কোনো চিন্তা মাথায় আসেনি। সে জন্য প্রথমে আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা করত না। সে জন্য একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। এমন সময় জানাত পারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) কথা। পরে নিয়ম মেনে আবেদন করি, পরীক্ষা দিই এবং বৃত্তি নিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাই। সুযোগ পাওয়ার পর আমার ও বাবার আনন্দ দেখে কে!’
যারা এবার পরীক্ষা দেবে তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে খ্রীস্টিনা কান্তা রিছিল বলেন, আসলে ইংরেজি ও গণিতের ওপর পরীক্ষা হয়। এ দুটোতে বেসিক ভালো হলেই হবে। আইইএলটিএস এর মতো ইংরেজি এবং গণিতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
ভর্তির পরের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল আপনার? এর উত্তরে খ্রীস্টিনা বলেন, ‘প্রথম যেদিন এইউডব্লিউতে পা রাখলাম, দেখি সবাই ইংরেজি কথা বলে। আমি তো বাংলা মিডিয়ামের, তাই জড়তা কাজ করত। কিন্তু শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাই অনেক আন্তরিক ছিল, অনেক সহযোগিতা করেছে। প্রফেসরগণ সব সময় বলত—যা পার, বলো। কেউ ভুল ধরত না। আস্তে আস্তে আমার জড়তা কেটে যায়। এইউডব্লিউতে অনেক ক্লাব আছে। সেগুলোতে যুক্ত হয়েছি। প্রায় সবগুলোতেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত ছিলাম। আমি মিউজিক খুব পছন্দ করি। সে জন্য মিউজিক ক্লাবে নিয়মিত যেতাম।’
এগুলো কি কাজে দেয়? এর উত্তরে খ্রীস্টিনা বলেন, ‘ক্লাবগুলোতে যুক্ত থাকলে অনেক ধরনের কর্মকাণ্ড করতে হয়, অনেক সঙ্গে কথা বলতে হয়। এতে অনেক কিছু শেখা হয়, সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায়। যেমন, আমি এখন যেকোনো জায়গায় গেলে সব মেনেজ করতে পারব—এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।
এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের জন্য খ্রীস্টিনার পরামর্শ হলো, ‘সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে হবে। নিজেকে কোনো বাউন্ডারির মধ্যে না রেখে, চুপ না থেকে সব বলতে হবে। কথা বলতে হবে, পারফর্ম করতে হবে। কারণ এই এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিগুলো নিজেকে তৈরি করতে সহায়তা করে। চাকরি ক্ষেত্রেও অনেক সহায়ক হয়।’
এখন কি স্বপ্ন দেখে খ্রীস্টিনা, জানতে চাইলে বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর করতে চাই। নিজ দেশে ও গারো সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে চাই।’
উল্লেখ্য, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ অসচ্ছল, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন।
২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নতুনভাবে নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’ নামে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৫৬ জনসহ ২০২২ পর্যন্ত মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।
অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।