যারা একসময় বিয়ে দিতে জোর করত, তারাই এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করে

২০২৩ সালে ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি পাওয়া সিলেটের একটা চা-বাগানের মেয়ে সাবেরা আক্তার।ছবি: সৌরভ দাশ

দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম মেয়েসন্তান, যাঁরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি। চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ার সুযোগ পান তাঁরা। আবাসন, টিউশন ফি মওকুফসহ নানা সুবিধা তাঁদের দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সাল থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগিতায় ৪২ এবং ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসির সহযোগিতায় ৬৬ জনসহ মোট ১০৮ জন এ পর্যন্ত এই বৃত্তি পেয়েছেন। ৫২ জনের স্নাতক শেষ হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই দেশে–বিদেশে ভালো অবস্থানে আছেন। পড়ুন ২০২৩ সালে বৃত্তি পাওয়া সিলেটের একটা চা-বাগানের মেয়ে সাবেরা আক্তারের গল্প।

ছোটবেলা থেকে ইংরেজির প্রতি আমার একটা আলাদা টান। ইংরেজি পড়তে ভালো লাগত। ইংরেজি বলার দক্ষতাটাও ছিল অনেকের চেয়ে ভালো। এখন যখন একটা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডর দিয়ে হাঁটি, মনে হয় এ রকম একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার স্বপ্নই তো আজীবন দেখেছি।

তবে স্বপ্নটা যে সত্যি হতে পারে, কখনো ভাবতে পারিনি। সিলেটের একটা ছোট্ট চা-বাগানে বড় হয়েছি। বাবা পেশায় চা-শ্রমিক। মা গৃহিণী। ছোট ভাইটা মাদ্রাসায় পড়ে। বড় ভাই চাকরির খোঁজে আছেন। পরিবারে আমিই প্রথম যে উচ্চশিক্ষার জন্য বাড়ির বাইরে পা রেখেছি। স্কুলজীবনে পড়ালেখাটা সহজ হয়ে গিয়েছিল মেধাবৃত্তি পেয়েছিলাম বলে। কিন্তু কলেজে পড়তে পারব কি না, সেই নিশ্চয়তা ছিল না। আমাদের পরিবারে এসএসসির পরপরই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ‘নিয়ম’। তাই যখন মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হলাম, আত্মীয়স্বজন নানা কথা বলেছিল। ‘মেয়েকে এত পড়িয়ে কী হবে’, ‘বাড়ির মেয়ে এতবার বাইরে যায় কেন?’ কিন্তু বাবা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন সব সময়।

অনেক সংগ্রাম করে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর এক আপুর কাছ থেকে এইউডব্লিউর খোঁজ পাই। ভাগ্যিস এখানে সুযোগটা হয়েছিল। না হলে আমার আর পড়ালেখা করা হতো না। যে আত্মীয়স্বজন একসময় আমাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করতেন, এখন তারাও আমাকে নিয়ে গর্ব করেন।