ময়মনসিংহের সদর উপজেলার কিসমত গ্রামের মেয়ে অরনীকা জামান আখিঁ। বাবা আশরাফুজ্জামান কৃষি কাজ করতেন আর মা দেলোয়ারা বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ছিলেন। তাদের অল্প আয়ে সংসার চালানো ও পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন ছিল। পরিবারে অসচ্ছলতা সত্ত্বেও বাধা অতিক্রম করে অদম্য ইচ্ছা নিয়ে এগিয়েছেন অরনীকা। তিনি ২০১৮ সালে আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করেছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে। বর্তমানে তিনি অ্যাডজাঙ্কট্ ম্যাথ ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দিয়েছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই।
অরনীকা জানালেন, ‘তিনি তাঁর পরিবারে প্রথম গ্র্যাজুয়েট সম্পন্নকারী নারী।’ তাঁর পরিবার প্রথম গ্র্যাজুয়েট হওয়া ও বর্তমান পরিস্থিতির যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে। গত ০১ মার্চ ২০২৩, বুধবার, বেলা ৩টায় প্রথম আলো ট্রাস্ট এই অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সবার জন্য বলব যে,এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ এটা নিজেকে তৈরি করতে সহায়তা করে। জড়তা দূর করা, নেতৃত্ব তৈরি করাসহ চাকরি ক্ষেত্রেও অনেক সহায়ক হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।অরনীকা জামান আখিঁ, অ্যাডজাঙ্কট্ ম্যাথ ফ্যাকাল্টি ,এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম।
অরনীকার স্বপ্ন পূরণ ও এইউডব্লিউর জার্নি সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। আমি এই ব্যবস্থায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাইনি। পরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ভর্তির সুযোগ পাই। আমার মা গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ছিলেন, ওখান থেকেই জানতে পারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন সম্পর্কে। পরে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষাবৃত্তি পাই। আর আমার দৈনন্দিন ও অন্যান্য যে খরচগুলো আছে সেগুলো আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া বৃত্তি থেকে পাই। এরপর আমাকে আর পরিবারকে আর কোনো চিন্তা করতে হয়নি। এটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে।’
চাকরি বিষয়ে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করেই চাকরিতে জয়েন করার। কারণ আমার পরিবারকে দেখতে হবে। সে জন্য অনেক জায়গায় সাক্ষাৎকার দিই। ফাইনালি আমার বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে অ্যাডজাঙ্কট্ ম্যাথ ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দিই। প্রথমে ভেবেছিলাম বেসরকারি সংস্থায় কাজ করব। পরে মনে হলো এইউডব্লিউতে সুযোগ থাকলে ওখানেই করব। শেষ পর্যন্ত এখানে হয়ে গেল।’
কোনো সমস্যায় পড়তে হয়েছে কি পড়াশোনা করতে গিয়ে? এর উত্তরে অরনীকা বলেন, ‘হ্যাঁ, সমস্যা হয়েছে। দূরে গিয়ে পড়াশোনা করা, হোস্টেলে থাকা, ড্রেস নিয়ে কথা শুনতে হয়েছে। তবে মা-বাবা বাধা দেয়নি।’
মা-বাবার অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে অরনীকা জানান, ‘তাঁরা অনেক গর্বিত এখন। মেয়ে কি করে? এর উত্তরে বলতে পারেন, মেয়ে শিক্ষক হয়েছে।’
এইউডব্লিউতে ডাইভার্সিফাই পরিবেশে কীভাবে খাপ খাওয়ানোর বিষয়ে অরনীকা বলেন, ‘প্রথমে আমিও ধাক্কা খেয়েছি। গ্রাম থেকে ওঠে আসা একটা মেয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আস্তে আস্তে সব অভারকাম করেছি।’
এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের জন্য অরনীকা বলেন, ‘এখন যারা আসছে তারা আগে থেকেই অনেক কিছু জেনে বুঝে আসতে পারেন। কিন্তু আমরা যখন এসেছি তখন সেটা সম্ভব ছিল না। যা হোক, সবার জন্য বলব যে,এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ এটা নিজেকে তৈরি করতে সহায়তা করে। জড়তা দূর করা, নেতৃত্ব তৈরি করাসহ চাকরি ক্ষেত্রেও অনেক সহায়ক হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সে জন্য এখন থেকেই এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত হতে হবে।’
উল্লেখ্য, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। পরিবারের প্রথম নারী অথচ অসচ্ছল, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের এ রকম ১০ জনকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট এই বৃত্তির ব্যবস্থা করে। ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন।
২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নতুনভাবে নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’ নামে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৫৬ জনসহ ২০২২ পর্যন্ত মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।
অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।