‘নিজেকে মেলে ধরতে হবে, দেখবে সব সহজ হয়ে গেছে'

প্রিয়ন্তী পাল ২০১৮ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’শিক্ষাবৃত্তি পান।

 'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার অমরপুর গ্রামের মেয়ে প্রিয়ন্তী পাল। প্রিয়ন্তী পালই তাঁর পরিবারের প্রথম মেয়ে যিনি স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। প্রিয়ন্তী পাল ২০১৮ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’শিক্ষাবৃত্তি পান। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) জনস্বাস্থ্য বিভাগে পড়াশোনা করেন। ২০২৩ সালের মে মাসের শেষের দিকে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে ঢাকার বনানীতে এমপাওয়ার (mPower) নামের একটি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা নির্বাহী হিসেবে কর্মরত। জনস্বাস্থ্য খাতে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে স্নাতকোত্তর করবেন—এটাই প্রত্যাশা তাঁর।

প্রিয়ন্তী পাল তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন গত ৬ মে ২০২৩, শনিবার, বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত 'অদ্বিতীয়ার গল্প' নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে।

আলো ট্রাস্ট আয়োজিত 'অদ্বিতীয়ার গল্প' নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন প্রিয়ন্তী পাল।

অনুষ্ঠানে তাঁর এগিয়ে চলার গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি যেহেতু গ্রামে ছিলাম, তাই এইউডব্লিউ সম্পর্কে জানতাম না। ভালো ছাত্রী হিসেবে আমার পরিচিতি ছিল। হাইস্কুল পর্যন্ত গ্রামে, পরে এইচএসসি নোয়াখালীতে পড়ি। এক সময় প্রথম আলোর শিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে জানতে পারি। সব নিয়ম মেনে আবেদন করি। লিখিত ও ভাইভাতে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ পাই।’

চট্টগ্রামে যাওয়ার বিষয়ে কোন সমস্যা হয়েছে কি? উত্তরে প্রিয়ন্তী বলেন, ‘হ্যাঁ হয়েছে। প্রথমবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাইনি। পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে এইউডব্লিউতে সুযোগ পাই। এইউডব্লিউতে ভর্তি সঠিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। পরে ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পর ধারণা পরিবর্তন হয়ে যায়। এই সিদ্ধান্তটা আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। এখন আমি নিজের পরিবর্তনটা বুঝতে পারি। প্রথম যেদিন ক্যাম্পাসে যাই, এক রুমে ৫ দেশের ৫ জন মেয়ে ছিল। আমি বাংলা মাধ্যমের হয়ে কীভাবে নিজে খাপ খাওয়াব সেটা চিন্তার বিষয় ছিল। তবে সিনিয়ররা অনেক হেল্পফুল। তারা অনেক সহযোগিতা করে। এক সময় সব কাটিয়ে উঠি। সবাই বন্ধু হয় যাই।’

ক্লাসে অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে প্রিয়ন্তী জানান, ‘ডাইভার্সিফাই পরিবেশটাতে সবাই সবাইকে অনেক হেল্প করে। প্রফেসরগণ অনেক অনুপ্রেরণা দেন, সহযোগিতা করেন। আমি যে বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই, এই সাহসটা এখান থেকেই পেয়েছি। এখানে আসার পর নিজের ওপর যে কনফিডেন্স তৈরি হয়েছে—যেকোনো দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারব।’

পরের ইচ্ছা সম্পর্কে তিনি জানান, ‘আমার লক্ষ্য দেশের বাইরে জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর করা। আপাতত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য চাকরি করছি। এরপর টার্গেট হলো আইইএলটিএস দিয়ে ভালো একটা স্কোর করার। দেশের বাইরে থেকে জনস্বাস্থ্য নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে দেশে ফিরে কিছু করব। দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি কিছু করার ইচ্ছা আছে। আমার নিজ কমিউনিটিতে কাজ করব। তা ছাড়া এনজিও এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।’

এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের পরামর্শ দিয়ে প্রিয়ন্তী বলেন, এইউডব্লিউ একটা ইউনিক জায়গা। এখানে সবাই হেল্পফুল। এখানে নিজেকে গুটিয়ে রাখা যাবে না। নিজেকে মেলে ধরতে হবে। দেখবে, সবকিছু সহজ হয়ে গেছে।’