আত্মবিশ্বাস নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ’ প্রা্প্ত তাসলিমা খাতুন।

তাসলিমা খাতুন ২০১২ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে। একই সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন করেছেন। নেত্রকোনার জেলার দুর্গাপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে তাসলিমা টিচ ফর বাংলাদেশ (টিএফবি) নামক প্রতিষ্ঠানে ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। এখন বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর বাবা ছিলেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। পড়াশোনার খরচ মেটানো কঠিন ছিল তাসলিমার জন্য। তারপরও থেকে যাননি, এগিয়ে গেছেন নিজের চেষ্টায়।

তাসলিমা তাঁর এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘ছোটকালে অর্থনৈতিক চাপ বুঝতাম না। যখন ৫ম শ্রেণিতে উঠলাম, তখন গাইড বই কিনতে হয়, প্রাইভেট পড়তে হয়। এই সময় টাকার অভাবে এগুলো কিনতে পারতাম না। পরে প্রাথমিক বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা চালিয়েছি। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাই। এভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাণিজ্য শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। কলেজের শিক্ষকগণও অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সৌজন্য কপি আমাকে দিয়ে দিতেন। পরে আমাকে নিয়ে একটা পত্রিকায় সংবাদ বের হয়। সেটা দেখে একজন আমাকে প্রতি মাসে এক হাজার করে টাকা দিত। এভাবে এইচএসসি পরীক্ষা দিই এবং জিপিএ-৫ পাই। এরপর আমি একা ময়মনসিংহে চলে আসি কোচিং করতে। মেস ঠিক করা, কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া—এসব নিজে নিজে করেছি। এমনকি নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনিও করতে হয়েছে। এ কারণে প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে আমার এক আপুর মাধ্যমে এইউডব্লিউ’র ভর্তির বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে পারি। সবকিছু ভালোভাবে পড়ে আবেদন করি। ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিই। বৃত্তিসহ ভর্তির সুযোগ পাই।’

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ’ প্রা্প্ত তাসলিমা খাতুন।

পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না, তাই বলে পড়াশোনা করতে পারবেন না—এটা মেনে নিতে পারছিলেন না তাসলিমা। তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, হয়েছেন সফল। পরিবারের প্রথম হিসেবে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। সব বাধা ঠেলে সফল হওয়ার বিষয়টা তাঁকে আনন্দ দেয়। এখন বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেবা করতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে অদ্বিতীয়া। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৫৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।